বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে রুখে দেয়া হয়েছে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্তই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই মেয়াদসীমা নির্ধারণ স্বৈরাচার প্রবণতাকে রোধ করার ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য। তিনি আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় এবং স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রধানমন্ত্রী মেয়াদসীমা ১০ বছর নির্ধারণ: স্বৈরাচার বিরোধী পদক্ষেপ

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কোনো ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। ১০ বছরের মেয়াদসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে স্বৈরাচারী মনোভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এক ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকলে যে সকল ধরনের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড জন্মায়, তা প্রতিরোধ করা যাবে। তাই এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সুসংগঠিত করার জন্য এক বড় অর্জন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অতীব প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা না হলে, দেশের সংবিধান ও আইনের শাসন দুর্বল হবে। তিনি বলেন, “কোনো আইন যদি বিচারাধীন হয়ে থাকে, তবে সেটি সাংবিধানিক বিচার বহাল থাকাটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কোনো আইন আদালতের বিচারবহির্ভূত থাকবে, এমন পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।”

এছাড়াও, সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা দায়িত্বশীল এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ভারসাম্য থাকতে হবে, যাতে কোনো একটি বিভাগ অন্য বিভাগটির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।”

গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন

বিএনপির নেতার মতে, শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “সর্বস্তরের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য থাকতে হবে। বিচার বিভাগ, আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগ—তিনটি স্তরই স্বাধীন ও সমন্বিতভাবে কাজ করলে গণতন্ত্র মজবুত হবে।”

তিনি আরও বলেন, দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। “আমরা যে রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি, তা শহীদদের রক্তে লালিত। তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমাদের কর্তব্য রয়েছে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারলে দেশের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে।”

ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

সালাহউদ্দিন আহমদ দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে সবাইকে একত্রিত হতে হবে, কারণ এটি দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় অপরিহার্য।”

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: গণতন্ত্রের প্রাণ

বিএনপির এই নেতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “যে দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন থাকে, সেখানেই গণতন্ত্র শিকড় গেড়ে থাকে। সাংবাদিকদের মালিকের চাকরি নয়, বিবেকের চাকরি করতে হবে। গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়।”

প্রধানমন্ত্রী মেয়াদসীমা নির্ধারণের গুরুত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রনায়কের দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষমতা কখনো কখনো স্বৈরাচার প্রবণতার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতা প্রণালী দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংগতি, বিচার বিভাগীয় দুর্বলতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্রেক ঘটাতে পারে। এজন্য মেয়াদসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও গণতান্ত্রিক কাঠামো মজবুত করা যায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রধানমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রপতির মেয়াদসীমা নির্ধারণ করে থাকে যাতে করে স্বৈরাচার ও ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ রোধ করা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়াটি গণতান্ত্রিক সংস্কার ও শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা: গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ

বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন না হয়, তাহলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব বেড়ে যায়। সংবিধানের মূল বিষয় হলো বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাতে করে তারা সরকারের চাপ বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই সঠিক বিচার প্রদান করতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমদের মত অনুযায়ী, বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মানে হলো তারা দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল থাকবে এবং তাদের ক্ষমতা অপব্যবহার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতা বিভাজন

শাসন ব্যবস্থায় নির্বাহী, বিচার ও আইনসভা এই তিন বিভাগের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নিশ্চিত করা গেলে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কোনো একটি বিভাগের উপর অন্য বিভাগের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি হলে সেটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

এই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইন শৃঙ্খলা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দায়িত্ব

বিগত আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন পূরণ করা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের কর্তব্য। শহীদদের রক্তাক্ত রাজপথের ওপর দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের গুরুত্ব

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানেই দেশের গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সাংবাদিকদের মালিক বা পৃষ্ঠপোষকের নয়, জনগণের বিবেকের চাকরি করতে হবে। গণমাধ্যমের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে জনগণ তথ্যের সঠিক প্রবাহ পায় এবং সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যের মূল ভাবনা হলো, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের মাধ্যমে স্বৈরাচার রোধ করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, নির্বাহী ও আইনসভা বিভাগের ভারসাম্য রক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান তিনি জানিয়েছেন।

এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে ও দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button