আজ ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা

কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড পেলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ (১২ জুন) ব্রিটেনের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন। লন্ডনের ঐতিহাসিক সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস নিজে প্রধান উপদেষ্টার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেবেন।
চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে অধ্যাপক ইউনূস
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। এই সফরে তাঁর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পুরস্কার গ্রহণ নয়, বরং বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নানা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ (১২ জুন) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড: অর্থ ও গুরুত্ব
‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ একটি বিশেষ সম্মান, যা দানশীলতা, সামাজিক উন্নয়ন এবং সবার জন্য শান্তি ও সহযোগিতার প্রচেষ্টায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। এই পুরস্কার ব্রিটেনের রাজা চার্লসের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, যা বিশ্বজুড়ে শান্তি এবং মানবকল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বীকৃতি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য এই পুরস্কার একটি গৌরবের ব্যাপার, কারণ তিনি মাইক্রোফাইনান্সের মাধ্যমে গরীব মানুষের জীবন পরিবর্তনে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৬ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, আর তার পর থেকে তিনি বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন।
আজকের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ও বৈঠক
পুরস্কার গ্রহণের পাশাপাশি, অধ্যাপক ইউনূস আজ বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ করবেন। এটি একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক সাক্ষাৎ, যা বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কের শক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এরপর তিনি ওয়েস্ট মিনিস্টারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হলির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর বিভিন্ন দিক আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অবদানের পরিচিতি
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বে মাইক্রোফাইনান্স ও ক্ষুদ্রঋণের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর এই মডেল গরীব ও অবহেলিত মানুষের আত্মকর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষ বিশেষত নারীশিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই উদ্ভাবনী ব্যাংকিং সিস্টেম আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও অনুসৃত।
বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্ব দরবারে সম্মান
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফলতা শুধু বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিফলন। তাঁর কাজ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি আরো উজ্জ্বল করেছে।
এই ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ তার দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম ও অবদানের স্বীকৃতি। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও মানবিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
পুরস্কার গ্রহণের পর করণীয়
অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর ও পুরস্কার গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভবিষ্যতে ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশি উদ্যোগ ও প্রকল্পে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।
ব্রিটেনের সেন্ট জেমস প্যালেসে আজকের এই গৌরবময় মুহূর্তে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তির মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্বে মানবকল্যাণের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন।