বাস উল্টে সহকারী নিহত, আহত ১৯ জন যাত্রী

ময়মনসিংহে সকালে ঘটে গেল একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। আজ বুধবার (১১ জুন ২০২৫) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে নগরীর ব্যস্ততম চায়না মোড় এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাসের সহকারী মো. মঞ্জুরুল হাসান (৪১) এবং আহত হন অন্তত ১৯ জন যাত্রী।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা-শেরপুর রুটের একটি চলন্ত বাস ‘জুনায়েদ এক্সপ্রেস’-এ। গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনাটি?
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শেরপুর থেকে ঢাকার দিকে যাওয়া গ্যাসচালিত ‘জুনায়েদ এক্সপ্রেস’ বাসটি চায়না মোড় এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিভাজক ভেঙে উল্টে পড়ে। বাসটি মাঝ রাস্তায় থাকা কংক্রিট বিভাজকের ওপর উঠে যায় এবং সেটি ভেঙে বাস উল্টে যায়।
বাসের সহকারী মঞ্জুরুল হাসান ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন এবং বাসটিতে সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আহতদের অবস্থা
ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা ও পথচারীরা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম বলেন:
“আহতদের মধ্যে সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। বাকি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তে কী পাওয়া গেছে?
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসচালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। চালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান। পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।
ওসি ফিরোজ হোসেন আরও জানান:
“চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।”
দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালজুড়ে দেশে প্রায় ৫ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসচালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং সড়কের দুরবস্থা—এসবই দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে বারবার উঠে আসে।
এই ঘটনাটিও সম্ভবত সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে চালকের ঘুম বা অসতর্কতা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয়দের বক্তব্য
চায়না মোড় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন:
“প্রায়ই এখানে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার মাঝখানে বিভাজক আছে, কিন্তু সতর্ক সংকেত বা গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে চালকরা হঠাৎ বিভ্রান্ত হয়ে যান।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম, বিশেষ করে সকালে। এমন দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের আরও সক্রিয়তা দরকার।”
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারদের জন্য ক্ষতিপূরণ দরকার
বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের পরিবার সাধারণত দ্রুত আর্থিক সহায়তা পান না। তাই সচেতন মহল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ চালু করা হোক।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশ্রামের সময় নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং চালু না করলে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।”
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিচের বিষয়গুলো জরুরি:
- বাসচালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স যাচাই
- বাসচালকদের জন্য নির্ধারিত সময়ের ঘুম ও বিশ্রাম
- গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সিগনাল ও স্পিড ব্রেকার
- ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে বাসের গতি ও অবস্থান মনিটরিং
- চালকদের ঘুমঝাঁকি প্রতিরোধী প্রযুক্তির ব্যবহার (যেমন সেন্সর)
ময়মনসিংহে ঘটে যাওয়া আজকের এই বাস দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—আমাদের সড়কপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। একজন সহকারীর প্রাণ গেছে, ১৯টি পরিবার আজ আতঙ্কে। সময় এসেছে—আরও কঠোর আইন প্রয়োগ, চালকদের উপর নজরদারি বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা গড়ে তোলার।
Signalbd.com সবসময় থাকবে জনগণের পাশে, সঠিক ও সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দিতে।