বাংলাদেশ

ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা বন্ধ, কিট সংকটে দেশ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে বেড়ে চলেছে। ঢাকার বাইরে এখন কার্যত করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না, কারণ সেখানে পরীক্ষার কিট নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে পরীক্ষাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কিটের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। ঈদের সময়ে ভিড়, যাতায়াত এবং পর্যটনের কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা প্রায় বন্ধ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মাত্র ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যার পুরোটাই ঢাকা শহরে। এর মধ্যে ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকার বাইরে কোনো পরীক্ষাই হয়নি। অথচ কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ একাধিক জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সংক্রমণ রয়েছে—তবে পরীক্ষা না হওয়ায় সেটি দৃশ্যমান হচ্ছে না।

জেলায় জেলায় কিটের সঙ্কট ভয়াবহ

  • কক্সবাজার: আরটিপিসিআর সুবিধা থাকলেও নেই দ্রুত পরীক্ষা (র‌্যাপিড টেস্ট) কিট।
  • চট্টগ্রাম: মেডিকেল কলেজে আরটিপিসিআর আছে, কিন্তু জেলার কোথাও র‌্যাপিড কিট নেই।
  • বরিশাল ও সিলেট: কোনো ধরনের করোনা পরীক্ষার কিট নেই।
  • ঢাকা ছাড়া সারাদেশে: প্রায় সব জেলায় টেস্ট কার্যক্রম থমকে গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ কিট সংগ্রহে জোর দিচ্ছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, জরুরি ভিত্তিতে তারা দেশি-বিদেশি উৎস থেকে কিট সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে ২৮ হাজার র‌্যাপিড কিট এবং ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট পাওয়া গেছে। আরও ১ লাখ আরটিপিসিআর এবং ৫ লাখ র‌্যাপিড কিটের জন্য ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) কাছে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কিট সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

নতুন ধরনের করোনা ধরন: জেএন–১ ও এক্সএফজি

বর্তমানে বাংলাদেশে করোনার যে ধরনটি ছড়াচ্ছে, তা অমিক্রনের উপধরন জেএন–১। ভারতে নতুন একটি ধরন এক্সএফজি পাওয়া গেছে, যা ঘনিষ্ঠ ভ্রমণ সংযোগ থাকায় বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেএন–১ তুলনামূলকভাবে কম তীব্র হলেও সংক্রমণ হার বেশি। যেহেতু সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে, তাই এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে উঠতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা ও পদক্ষেপ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর জানিয়েছেন:

  • এখনও পর্যন্ত WHO কোনও আন্তর্জাতিক সতর্কতা জারি করেনি।
  • তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে, তাই বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
  • দেশের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, জেলা হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • অক্সিজেন সরবরাহ, ওয়ার্ড প্রস্তুতি, এবং প্রয়োজনে টিকা কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঈদের ভিড়: সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য কারণ

করোনা সংক্রমণের খবরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ঈদের সময় নিম্নলিখিত কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা:

  1. পশুর হাটে ব্যাপক ভিড়
  2. গ্রামে যাওয়ার সময় বাস, ট্রেন, লঞ্চে গাদাগাদি ভ্রমণ
  3. পর্যটনকেন্দ্রে বিশাল জনসমাগম
  4. বিয়েবাড়ি ও উৎসবমুখর পারিবারিক অনুষ্ঠান

এই পরিস্থিতিতে কিটের সংকট থাকায় সংক্রমণ শনাক্তে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

টিকা: মজুত আছে, কিন্তু কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়

বর্তমানে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কার্যালয়ের তথ্যমতে:

  • মজুত টিকা: ৩১ লাখ
  • উৎপাদক: ফাইজার
  • ১৭ লাখ টিকার মেয়াদ শেষ হবে: ৫ আগস্ট ২০২৫ এর মধ্যে

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ফাইজারের টিকা মূল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি। বর্তমান ভ্যারিয়েন্টে এটি কতটা কার্যকর, তা নিয়ে অনেকে সংশয়ে রয়েছেন। তাই একটি নতুন কারিগরি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যারা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: এখনই পদক্ষেপ নিন

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন:

“যতটুকু পরীক্ষা হচ্ছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে সংক্রমণ বাড়ছে। যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তা হলে জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।”

তিনি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:

  1. মাস্ক ব্যবহার করুন
  2. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন
  3. সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে
  4. জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে বাড়িতে থাকুন, অন্যদের থেকে দূরে থাকুন

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের করণীয়

পরীক্ষার সুযোগ থাকলে অবশ্যই টেস্ট করুন
সরকারি ঘোষণা ও সতর্কতা মনোযোগ দিয়ে শুনুন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন সর্বদা
টিকার মেয়াদ ও কার্যকারিতা জেনে প্রয়োজনে টিকা গ্রহণ করুন
অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও জনসমাগম থেকে বিরত থাকুন

সংক্ষেপে পরিস্থিতি (১১ জুন ২০২৫ পর্যন্ত)

বিষয়তথ্য
গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষা১০১ জন (সবাই ঢাকার)
শনাক্ত১৩ জন (সবাই ঢাকার)
ঢাকার বাইরে পরীক্ষাকার্যত বন্ধ
নতুন সংক্রমণ ধরনজেএন-১ ও ভারতের এক্সএফজি
মজুত টিকা৩১ লাখ (ফাইজার), ১৭ লাখের মেয়াদ ৫ আগস্টের মধ্যে
দ্রুত কিট সংকটসব বিভাগেই নেই বা সীমিত
সরকার প্রস্তুতিঅক্সিজেন, টেস্ট, টিকা পরিকল্পনা পর্যালোচনায়
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button