অর্থনীতি

ট্রাম্পের ৫০% শুল্কে ভারতের শেয়ার বাজারে ধস

Advertisement

 ভারতীয় পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বড় ধাক্কা খেল ভারতের শেয়ার বাজার। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের অর্থনীতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ঘটনা কী ঘটেছে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার একদিনের মধ্যেই ভারতের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই সেনসেক্স সূচক ৩৩৫.৭১ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে ৮০,২০৮.২৮-এ দাঁড়ায়, আর নিফটি সূচক ১১৪.১৫ পয়েন্ট কমে ২৪,৪৬০.০৫-এ নেমে আসে।

শেয়ার বাজারের এই পতন শুধুই সংখ্যার খেলা নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির সরাসরি প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পেছনের প্রেক্ষাপট

ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। তার প্রশাসনের আমলেও তিনি ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবারের ঘোষণা বিশেষভাবে গুরুতর, কারণ তা সরাসরি ভারতের রপ্তানি খাতকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নির্বাচনী মৌসুম চলছে, যেখানে ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজনৈতিকভাবে চীনের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির প্রশ্ন তুলে এই শুল্ক আরোপের কথা বলছেন তিনি।

ভারতের শেয়ার বাজারে প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই ভারতীয় শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই বড় পতন দেখা যায় দুই প্রধান সূচকে—সেনসেক্স ও নিফটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ায় এমন পতন হয়েছে। যদি এই শুল্ক নীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের রপ্তানি নির্ভর শিল্প খাত—বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মা এবং স্টিল খাত—বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

শুল্ক নীতির অর্থনৈতিক প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৩০ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত প্রভাব পড়তে পারে।
এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ-এর সিইও ধীরাজ রেল্লির মতে, “এই ধরনের আমদানি শুল্ক ভারতের রপ্তানিমুখী শিল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতি শ্লথ হতে পারে।”

তবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এখনো তাদের জিডিপি পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রেখেছে। অর্থাৎ, তারা এখনই ঝুঁকি মূল্যায়ন করে পূর্বাভাসে পরিবর্তন আনেনি, তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।

বিনিয়োগ পরিবেশে প্রভাব ও বাজারের ভবিষ্যৎ

কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর সিইও নিলেশ শাহ বলেন, “শুল্ক দ্বিগুণ হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এমন অনিশ্চয়তা সহ্য করতে নারাজ। শুল্ক বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে ভারতের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি, বাজারে তারল্যের অভাব দেখা দিলে আরও পতন ঘটতে পারে।

তবে আশার কথা হলো, ডলার-রুপি ফরওয়ার্ড চুক্তি (NDF) অনুযায়ী ভারতীয় মুদ্রা আজকের বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক বাজার এখনো পুরোপুরি আতঙ্কে ভুগছে না।

অন্যান্য দেশ ও মার্কেটের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, চিপ রপ্তানিকারকদের উপরেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন। তবে প্রযুক্তি খাতে মার্কিন বিনিয়োগকারী যেমন অ্যাপল ইতোমধ্যে কিছু ছাড় পেয়েছে, যার ফলে কিছু এশীয় বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে।

চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি ঘিরে নিজেদের রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে যদি মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি হ্রাস পায়।

সারসংক্ষেপ  

ট্রাম্পের ৫০% শুল্কের ঘোষণা ভারতীয় অর্থনীতির উপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। শেয়ার বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে কী হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যতের উপর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে ভারতকে তার রপ্তানিনীতিতে পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। এখন দেখার বিষয়—ভারতের সরকার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে কী ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে।

এম আর এম – ০৭৫০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button