শিক্ষা

ঢাবিতে প্রকাশ্যে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা, উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতে ৯ দফা দাবি পেশ

Advertisement

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। সংগঠনটির নেত্রীরা গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ৯ দফা দাবি পেশ করেন। দীর্ঘদিন আড়ালে থাকলেও এবার সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিল সংস্থাটি।

সাক্ষাতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভানেত্রী সাবিকুন্নাহার তামান্না এবং সেক্রেটারি আফসানা আক্তারসহ সংগঠনের আরও কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা উপাচার্য বরাবর নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেন এবং তা স্মারকলিপির আকারে উপস্থাপন করেন।

উপস্থাপিত মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:

১. নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করা – ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করার আহ্বান জানানো হয়।
২. পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা – খাবারের গুণগত মান উন্নয়নে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
৩. পর্যাপ্ত কমনরুম, নামাজরুম ও অজুখানার ব্যবস্থা – নারী শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত ও আলাদা স্থান নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
৪. মাতৃত্বকালীন সহযোগিতা – বিবাহিত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য গর্ভকালীন ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
৫. আবাসনসংকট নিরসন – অধিক সংখ্যক নারী শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থার দাবি তোলা হয়।
৬. অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজনে হলে প্রবেশের অনুমতি – বিশেষ প্রয়োজনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
৭. যৌন হয়রানিমুক্ত ক্যাম্পাস – যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর দাবি পেশ করা হয়।
৮. হলভিত্তিক মেডিসিনের সুব্যবস্থা – প্রতিটি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
৯. সততা ও নৈতিকতার চর্চা উৎসাহিত করা – ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা ও আচরণ চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়।

উপাচার্যের আশ্বাস

উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান তাঁদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে শোনেন এবং প্রতিটি বিষয় বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও নৈতিকতার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সাক্ষাতের পর ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে সাক্ষাতের বিস্তারিত তুলে ধরে। সেখানে বলা হয়, “আমরা আশাবাদী, প্রশাসন আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

ইসলামী ছাত্রী সংস্থা কারা?

ইসলামী ছাত্র সমাজের নারী শাখা হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালিয়ে এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে এটি তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করাই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, ঢাবিতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার এমন সরব উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের অন্যান্য সংগঠন ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় ও ভারসাম্য রক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও নৈতিক মূল্যবোধভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করার বিষয়টি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার এই পদক্ষেপ হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নতুন কিছু ভাবনার সুযোগ করে দেবে এবং ভবিষ্যতে আরও সংগঠনকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button