পাকিস্তানের ভয়ে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে ভারত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই মুখ খুলেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশটির বিমানবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সামরিক অভিযানের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরলেও, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে নারাজ তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধাবস্থায় থাকাকালীন সময়েই ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশ না করার কৌশলের পেছনে রয়েছে কূটনৈতিক ও কৌশলগত হিসাব—বিশেষ করে পাকিস্তানের হাতে এই তথ্য না তুলে দেওয়ার সচেতন প্রয়াস।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে মুখে কুলুপ
আজ রোববার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল এ কে ভার্তি বলেন, “আমরা এখনো যুদ্ধাবস্থায় আছি। আর ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই অংশ।”
তবে সাড়ে তিন দিনের যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ঠিক কতটুকু সামরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো সংখ্যা বা নির্দিষ্ট তথ্য দিতে চাননি। তার ভাষায়, “আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ কিছু বললে তাতে প্রতিপক্ষের লাভ হবে।”
পাকিস্তানের দাবি: ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
চলমান এই সংঘাতে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, পাকিস্তান অন্তত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবিকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার কিংবা স্বীকার করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনেও এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন কর্মকর্তারা।
লক্ষ্য পূরণের দাবি ভারতের
সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এয়ার মার্শাল ভার্তি বলেন, “আপনাদের এবং আমাদেরও উচিত নিজেদের কাছে শুধু একটি প্রশ্ন করা—আমরা কি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি?”
তিনি বলেন, “উত্তর হলো—হ্যাঁ। আমরা সীমান্তের ওপারে থাকা সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো ধ্বংস করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা যে উদ্দেশ্যে এই অভিযান পরিচালনা করেছি, তাতে আমরা সফল হয়েছি।”
ভারতীয় পক্ষের দাবি অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানেই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। বিমান হামলার মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে অবস্থিত বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় আঘাত হানা হয় এবং সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
গোপনীয়তার কারণ: কৌশলগত সুবিধা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধকালীন সময়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন রাখা মূলত কৌশলগত সুবিধা রক্ষার অংশ। কারণ, যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে যদি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করা হয়, তাহলে তা শত্রু পক্ষের জন্য তথ্যগত সুবিধা তৈরি করতে পারে।
একজন প্রাক্তন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। যুদ্ধের সময় তথ্য গোপন রাখা হয় শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে।”
পাইলটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
এয়ার মার্শাল ভার্তি নিশ্চিত করেছেন, অভিযান শেষে ভারতীয় পাইলটদের সবাই নিরাপদে ঘরে ফিরেছেন। তবে কতটি বিমান এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল বা ঠিক কোন কোন ঘাঁটি থেকে তা চালানো হয়েছিল—সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের পাইলটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সংবাদ
এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর তুলে ধরেছে।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তাদের মতে, “যখন সময় আসবে, তখন যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”
ভারতে সমালোচনার মুখে সরকার
ঘটনার গভীরে না গিয়ে কেবলমাত্র ‘লক্ষ্য পূরণ’ দাবি করায় দেশটির রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম মহলে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। বিরোধীদলীয় রাজনীতিকেরা দাবি করেছেন, সরকার শুধু সাফল্যের গল্প বলছে, কিন্তু জনগণের সামনে প্রকৃত ক্ষতির চিত্র তুলে ধরছে না।
কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, “যুদ্ধের খরচ কেবল সামরিক দিকেই সীমাবদ্ধ নয়—অর্থনীতি, কূটনীতি এবং মানবিক দিকও রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার আছে।”
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান বলছে, ভারতীয় বিমান হামলায় তাদের কয়েকটি এলাকায় আঘাত হানা হয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা তেমন বড় নয়। ইসলামাবাদ বলেছে, তারা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংঘাত এড়াতে চায়। তবে সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং সেনা মোতায়েন জোরদার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি এখন কোথায়
যদিও ভারত ‘যুদ্ধ’ শব্দটি সরাসরি ব্যবহার করছে না, তবে ‘যুদ্ধাবস্থা’ শব্দটি ব্যবহার করে তারা স্পষ্ট করেছে যে সংঘাত থেমে যায়নি। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে, আকাশপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর উচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি উভয় পক্ষ কূটনৈতিক সমাধানের পথে না আসে, তাহলে এই সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।