বিশ্ব

গাজা ইস্যুতে তেলআবিব উত্তাল: গণবিক্ষোভ ও ইসরায়েলে তীব্র প্রতিবাদ

২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট, রবিবার, ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে অনুষ্ঠিত এক বিশাল গণবিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এটি ছিল ইসরায়েলে চলমান গাজা যুদ্ধ ও জিম্মি মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত অন্যতম বৃহৎ প্রতিবাদ সমাবেশ। সমাবেশটি ‘অক্টোবর কাউন্সিল’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় গৃহীত ২৫১ জন জিম্মির পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে।

বিক্ষোভের মূল দাবি

বিক্ষোভকারীরা প্রধানত দুটি দাবিতে সোচ্চার ছিলেন:

  1. হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি: বর্তমানে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি নাগরিক হামাসের হাতে আটক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
  2. গাজায় চলমান সামরিক অভিযান বন্ধ করা: নেতানিয়াহু প্রশাসনের পরিকল্পিত গাজা সিটি অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

ধর্মঘট ও সমাবেশের ব্যাপকতা

এই প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসরায়েলজুড়ে ধর্মঘট পালিত হয়। বিভিন্ন শহরে অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তেলআবিবের হোস্টেজ স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলি পতাকা ও জিম্মিদের ছবি হাতে নিয়ে স্লোগান দেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা, যারা তাদের প্রিয়জনদের মুক্তির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

সমাবেশের সময় বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এ সময় অন্তত ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। জেরুজালেম, হাইফা ও অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভের রেশ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে প্রায় ৩০০ স্থানে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়।

গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়। ইসরায়েলি হামলায় গাজার ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০৩ জন শিশু রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৯০% মানুষ, অর্থাৎ ১.৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং সেখানে ব্যাপক অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় মানবিক সংকটের জন্য ইসরায়েলি অবরোধ ও সামরিক অভিযানকে দায়ী করেছে। তবে, ইসরায়েলি গণমাধ্যম এই সংকটের ব্যাপারে সীমিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসি ও আল জাজিরার মতে, ইসরায়েলি গণমাধ্যম গাজায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরেনি, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েলি সরকার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা করছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মতে, এই অভিযানে প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হতে পারেন, যা মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এদিকে, বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলে চলমান বিক্ষোভ ও ধর্মঘট সরকারের নীতির প্রতি জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলন। বিক্ষোভকারীরা মানবাধিকার, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলও এই সংকটের সমাধানে ইসরায়েলের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

MAH – 12381 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button