জাতীয়

আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে

চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবশেষে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। সোমবার (৫ মে) সকালে এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ। শুনানিকালে অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ।

আলিফ হত্যা: পেছনের ঘটনাপ্রবাহ

গত বছরের ২৬ নভেম্বর ২০২৪—চট্টগ্রাম জেলা আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যায় ভয়াবহ এক সহিংস ঘটনা। সেদিন সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ও সংঘর্ষ শুরু হলে সেখানে একদল দুর্বৃত্ত আইনজীবী আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে

অত্যন্ত মর্মান্তিক এ ঘটনায় আইনজীবী সমাজ, আদালত এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

মামলার বিবরণ ও আসামির তালিকা

ঘটনার চারদিন পর, নিহত আলিফের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০–১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও একই ঘটনার জের ধরে—

  • আলিফের ভাই আলাদাভাবে আরও একটি মামলা করেন, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়
  • পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে আরও তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস: এবার গ্রেফতার দেখানো হলো

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার (৪ মে) আদালতে আবেদন করা হয়, যাতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সোমবার সকালে অনলাইন শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন

চিন্ময় দাস বর্তমানে অন্য একটি মামলায় কারাবন্দী রয়েছেন। ফলে আদালতের আদেশ অনুসারে তাকে এ মামলায়ও গ্রেফতার দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করা হবে।

চিন্ময়ের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আছে?

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস শুধু আলিফ হত্যা মামলার নয়, বরং সহিংসতা, উসকানি এবং হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত। তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে:

  • তিনি আদালত প্রাঙ্গণে উগ্র বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছিলেন।
  • তার সমর্থকদের মধ্যেই ছিল সেই গ্রুপ যারা আলিফকে হামলার শিকার করে।

তবে চিন্ময়ের আইনজীবী পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তিনি সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে এই মামলায় টেনে আনা হয়েছে।

আইনজীবী সমাজের প্রতিক্রিয়া

চট্টগ্রামের আইনজীবী সমিতির নেতারা বলছেন, “একজন আইনজীবী আদালতের ভেতরেই নিহত হয়েছেন, এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।” তারা দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া

আদালতের নির্দেশে এখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় তার ভূমিকা ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড শুধু একটি হত্যার ঘটনা নয়, বরং এটি দেশের বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের উপর এক গুরুতর আঘাত। এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে তদন্তে অগ্রগতি হলেও, মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার দেখানো মামলার তদন্তে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বিচারপ্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, সেটাই এখন দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button