বিশ্ব

ইয়েমেনে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও হুতিদের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও একধাপ উর্ধ্বগামী হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এর পাল্টা হিসেবে হুতিরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে পাল্টা প্রতিরোধ করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা ইরান-সমর্থিত হুতিদের সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের সাথে সংহতির ইঙ্গিত বহন করছে।

ইসরায়েলের ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ’: লক্ষ্য ইয়েমেনের বন্দরে হামলা

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক্স-সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত পোস্টে জানান, ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ’ নামক অভিযানের অংশ হিসেবে তারা ইয়েমেনের হুতিদের শক্তি কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
তাঁর কথায়, হুতিদের ‘ভয়াবহ মূল্য’ দিতে হবে এবং কেউ যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেই হাত ‘কেটে ফেলা হবে’।

হামলার টার্গেট কোথায়?

বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল:

  • হুদায়দাহ, রাস ইসা ও সাইফ—তিনটি বন্দর, যা ইয়েমেনের প্রধান বাণিজ্য ও সামরিক পোর্ট হিসেবে কাজ করে।
  • ইব ও তাইজ শহরের রাস কানাতিব বিদ্যুৎকেন্দ্র।

ইসরায়েলি বাহিনী হামলার আগে স্থানীয়দের সতর্ক করে এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তারা দাবি করেছে, ২০২৩ সালে হুতিদের দখলে থাকা ‘গ্যালাক্সি লিডার’ নামের বাণিজ্যিক জাহাজটিও হামলার লক্ষ্য ছিল।

হুতির পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও তাদের অবস্থান

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, তবে তা সফলভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের সফলতা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, হুতিরা নিজেদের সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে জানায়, তারা ইসরায়েলের বিমান হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে এবং পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে দিয়েছে। যদিও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তারা প্রকাশ করেনি।

ইয়েমেনের পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

ইয়েমেনের সংকট: বন্দরগুলোর গুরুত্ব

হুদায়দাহ বন্দর, যা প্রায়শই ইয়েমেনের জন্য খাদ্য ও মানবিক সহায়তার প্রধান প্রবেশ পথ হিসেবে কাজ করে, গত মে ও জুন মাসেও ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছিল।
এই বন্দরে হামলা মানে লাখ লাখ ইয়েমেনির জন্য তীব্র খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হওয়া।

হুতিরা ও ফিলিস্তিনের সংহতি

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই ইরান সমর্থিত হুতিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করে আসছে। তারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ ও ইসরায়েলের দিকে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।
এতে ইসরায়েল তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে ইয়েমেনে অভিযান চালাচ্ছে, যেখানে হুতি-নিয়ন্ত্রিত বন্দরে ইরান থেকে অস্ত্র পরিবহণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে বড় মঞ্চে নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত

ইসরায়েল-হুতির সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ইসরায়েল বলছে, তারা এমন কোনও অপারেশন মেনে নেবে না যা তাদের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করে। অন্যদিকে, হুতিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের যুদ্ধকে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে।

এই সংঘাত ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের এক নতুন আঙ্গিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ হুতিরা ইরানের শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইয়েমেনের এই নতুন উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আহ্বান জানিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল পক্ষকে সংযত হওয়ার এবং মানবিক সহায়তার পথে বাধা প্রদান থেকে বিরত থাকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে, যদি অবিলম্বে কূটনৈতিক পথ খুঁজে না পাওয়া যায়।

সংক্ষিপ্তসার

  • ইসরায়েল ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ’ এর আওতায় ইয়েমেনের হুতিদের নিয়ন্ত্রিত তিন বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে।
  • হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুতিরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে বলে দাবি করেছে।
  • হুদায়দাহ বন্দর, যা মানবিক সহায়তার প্রধান প্রবেশদ্বার, আগেও ইসরায়েলি হামলার মুখোমুখি হয়েছে।
  • হুতিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে আসছে, যা ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করেছে।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তির আহ্বান জানিয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করছে।

কীভাবে এই খবর Singnalbd.com এর জন্য প্রাসঙ্গিক?

এই খবর মধ্যপ্রাচ্যের একটি অন্যতম গ্লোবাল সংকটের ওপর আলোকপাত করে, যা আমাদের পাঠকদের আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ, এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট রাখে। এছাড়া, এই ধরনের গভীর বিশ্লেষণ ও তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন SEO দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে সার্চ ভলিউম সবসময়ই বেশি থাকে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button