ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নিট মুনাফা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে

বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও নিট মুনাফায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। ব্যাংকটি গত বছর ২,২৮৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮৫৪ কোটি টাকা বেশি। তবে নিট মুনাফা ২০২৩ সালের ৮০২ কোটি টাকা থেকে কমে ৪৭৩ কোটি টাকায় নেমেছে। এই পতনের পেছনে ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের কৌশলকে দায়ী করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
মুনাফার গতিপ্রকৃতি ও প্রেক্ষাপট
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফায় ব্যতিক্রমী সাফল্য দেখিয়েছে। ২০২৩ সালে পরিচালন মুনাফা ছিল ১,৪৩১ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২,২৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি ব্যাংকের পরিচালন দক্ষতা, বিনিয়োগ কৌশল এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের প্রমাণ। তবে নিট মুনাফার ক্ষেত্রে ছবিটি ভিন্ন। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নিট মুনাফা অর্জন করেছিল, যার পরিমাণ ছিল ৮০২ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে ৪৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকের মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে বলা হয়েছে, ঋণের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই সঞ্চিতি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এর ফলে নিট মুনাফায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
ব্যাংকের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার বক্তব্য
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এ বিষয়ে বলেন, “আমরা এবার পরিচালন মুনাফায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। তবে ভবিষ্যতের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আমরা চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখেছি। এটি ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এর ফলে নিট মুনাফা কমলেও শেয়ারধারীদের জন্য আমরা ২০ শতাংশ লভ্যাংশ বজায় রেখেছি।”
ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে ঋণের ঝুঁকি বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাড়ানো একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
লভ্যাংশ ঘোষণা ও শেয়ারধারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা
নিট মুনাফা কমলেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শেয়ারধারীদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অক্ষুণ্ন রেখেছে। ব্যাংকটি ১০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা মোট ২০ শতাংশ। এই লভ্যাংশ ঘোষণা ব্যাংকের শেয়ারধারীদের প্রতি আস্থা বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ। এটি ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানেরও ইঙ্গিত দেয়।
ব্যাংকিং খাতে প্রভাব
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এই আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার একটি প্রতিচ্ছবি। গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলার সমস্যার মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অন্যান্য ব্যাংকের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের শ্রেণীকরণ এবং সঞ্চিতি সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এটি ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।