ক্রিকেট

পারফরম্যান্স যতই খারাপ হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেতন বাড়ছেই!

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে আবারও ব্যর্থ। ঘরের মাঠে টানা ছয় টেস্টে পরাজয়, সর্বশেষ ইনিংসগুলোয় দুই শত রানের নিচে বারবার অলআউট হওয়া—এই চিত্র যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঠিক সেই সময়েই এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়ানোর খবর। ফলাফলবিহীন এই দলে পারিশ্রমিক বাড়ানো নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, বিতর্ক—এমনকি সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রূপও।

হার ও হতাশার মাঝেও বাড়তি আয়ের স্বাদ

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সদ্য সমাপ্ত টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে এসেছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচে প্রত্যেক খেলোয়াড় পেয়েছেন ৮ লাখ টাকা করে ম্যাচ ফি—যেখানে আগের ম্যাচ ফি ছিল ৬ লাখ। ওয়ানডেতেও ম্যাচ ফি ৩ লাখ থেকে বেড়ে ৪ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। অথচ, পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কেউ সেঞ্চুরি তো দূরের কথা, ইনিংসেই তিনশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। টেস্টে মাত্র তিনটি ফিফটি, আর শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হারের লজ্জা।

এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর বিরক্তি ঝরে পড়ে—‘বেতন বাড়ানোয় মনে হয় আপনারা খুশি না।’ যদিও পরে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে খেলাটা জরুরি… আমাদের অবশ্যই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে যে আমরা ভালো করতে পারছি না।’

“ডুয়িং নাথিং, টেকিং মানি”—সমালোচনার কেন্দ্রে ক্রিকেটাররা

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারের পর একদিকে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলেও, ক্রিকেটারদের ফর্মহীনতা, পারফরম্যান্সহীনতা ও শৃঙ্খলার অভাব নিয়ে ভক্তদের ক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে—এই বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কোথায়?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কুইজ ছুড়ে দিয়েছেন—”পৃথিবীর কোন জায়গায় খারাপ পারফরম্যান্স করলেও বেতন বাড়ে?” কেউ সরাসরি দাবি করছেন, “এদের ম্যাচ ফি কমিয়ে দাও”, আবার কেউ হাস্যরস করে বলছেন, ‘কাজ নাই, মজুরি নাই’ নীতিমালার আওতায় আনা হোক জাতীয় দলকে।

পরিবর্তন কোথায়? সাফল্যের স্বল্পতা, ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা

গত চার বছরে টেস্টে জিম্বাবুয়ের কোনো জয় ছিল না। সেই দলই এসে বাংলাদেশকে ঘরের মাঠে হারিয়ে দিয়েছে। বিগত ৯ ইনিংসে ৬ বার দুই শতের নিচে অলআউট—চিত্রটি শুধু হতাশাজনক নয়, বরং দেশের ক্রিকেট কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

বাংলাদেশ দল মাঝে মধ্যে বড় স্বপ্নের কথা বলে। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জেতা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়—এই ধরনের বিচ্ছিন্ন সফলতা হলেও তা একঘেয়ে ব্যর্থতার ধুলায় ঢাকা পড়ে যায়। এমন ব্যর্থতায় যাঁরা আছেন, তাঁদের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি কেবল কথার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ।

জবাবদিহির অভাব বনাম সুযোগ-সুবিধার প্রাচুর্য

ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন গ্রেডিং অনুযায়ী নির্ধারিত হলেও বিসিবি তাদের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় না। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে, উল্লেখযোগ্য হারে ম্যাচ ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি তখনই গ্রহণযোগ্য হতো, যদি পারফরম্যান্স থাকত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মাঠের ছবি যখন বিপরীত, তখন বেতন বৃদ্ধি অনেকের কাছেই খোঁটা মনে হয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জীবনযাত্রা, সুযোগ-সুবিধা এবং সাপোর্ট স্টাফের পরিমাণ বিশ্বের অনেক দলের চেয়ে উন্নত। অথচ ফলাফল উল্টো—ঘরের মাঠে লাগাতার হার, ব্যাটিংয়ে ধস, পরিকল্পনার অভাব, আর তার ওপর মানসিক দুর্বলতা। এর সব মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠেই—দায়ভার কোথায়?

সমালোচনা কি শুধুই আঘাত? নাকি জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা?

দেশের অনেক খাতেই পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রণোদনা দেওয়ার সংস্কৃতি আছে। খেলাধুলাও এর ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়। কাজের বিনিময়ে মজুরি—এটা নীতিগত বিষয়। তাই জাতীয় দলে থাকা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের প্রশ্নে জনমতের প্রতিফলন আসাটাই স্বাভাবিক।

ক্রিকেট বোর্ডের উচিত হবে খেলোয়াড়দের মধ্যে পারফরম্যান্সভিত্তিক প্রতিযোগিতা তৈরি করা। শুধুমাত্র নাম বা অবস্থান ধরে নয়, ফলাফলের ভিত্তিতে সুযোগ এবং সুবিধা নির্ধারণ করা। না হলে, ঘরের মাঠে হারলেও মুখে হাসি ও পকেটে টাকা—এই চক্রে দেশের ক্রিকেট ডুবতেই থাকবে।

  • বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি টেস্টে ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ এবং ওয়ানডেতে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখে উন্নীত হয়েছে।
  • টানা ৬ টেস্টে হার, ইনিংসে ধারাবাহিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও বেড়েছে বেতন।
  • সমালোচনায় পড়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তসহ পুরো দল।
  • সামাজিক মাধ্যমে ট্রল, বিদ্রূপ ও দাবিও উঠছে বেতন হ্রাসের।
  • খেলোয়াড়দের জবাবদিহির পাশাপাশি বোর্ডের নীতিগত সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা জরুরি।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button