জাতীয়

রোহিঙ্গা তহবিল সংকটের শঙ্কা, কাতারের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল সংকট দেখা দিতে পারে— এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের রাজধানী দোহায় আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান এবং কাতারকে সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সংকটে আবারও তহবিল ঘাটতির শঙ্কা

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সাময়িকভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সহায়তা দিয়ে চললেও, সেপ্টেম্বরের পর এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, “মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে এখন থেকেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সম্মেলনেও কাতারের সহযোগিতা প্রত্যাশা

প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সমস্যার টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই উদ্যোগে কাতারকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়।

রাখাইন পরিস্থিতির অবনতিতে পুনরায় উদ্বেগ

বৈঠকে ড. ইউনূস তুলে ধরেন মিয়ানমার সীমান্তের সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সক্রিয়তা ও সংঘাত নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

টেকসই সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৮ দফা সুপারিশ

রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে ড. ইউনূস ৮টি সুপারিশ তুলে ধরেন:

১. মানবিক অর্থায়ন নিশ্চিত রাখা

খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও আশ্রয় নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত অর্থায়ন প্রয়োজন।

২. জীবিকা সহায়তা

শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে তাদের স্বনির্ভরতা বাড়ানো জরুরি।

৩. ভাসানচর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব

ভাসানচরে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, শিক্ষাব্যবস্থা ও পানীয়জলের সুযোগ বৃদ্ধিতে কাতারসহ উন্নয়ন অংশীদারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

৪. শিক্ষা সহায়তা

রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোরীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তারের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

৫. পরিবেশ সুরক্ষা

বৃক্ষরোপণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহায়তা বাড়ানো জরুরি।

৬. অবকাঠামো উন্নয়ন

কক্সবাজার ও ভাসানচরের অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।

৭. আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংলাপ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।

৮. রোহিঙ্গা নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা

রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে যাতে তাদের নিজস্ব দাবি ও চাহিদা প্রতিফলিত হয়।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশ্ব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম দেশগুলোর সহায়তা এই সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ড. ইউনূসের আহ্বানে কাতার কীভাবে সাড়া দেয়, তা আগামীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button