
ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের উত্তেজনার শেষ পর্বে এসে অনেক হিসাব-নিকাশের মধ্য দিয়ে ঠিক হলো কে ফিরবে প্রিমিয়ার লিগে সরাসরি আর কে ধরবে প্লে-অফের পথ। শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে বার্নলির ২-১ গোলের জয় নিশ্চিত করেছে তাদের ও লিডস ইউনাইটেডের প্রিমিয়ার লিগে প্রত্যাবর্তন। আর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর শেফিল্ড ইউনাইটেডকে নামতে হবে প্লে-অফে।
শেফিল্ডের জন্য এক দুঃখের সন্ধ্যা
টার্ফ মুরে আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নেমেছিল দুটি দলের ভিন্ন রকম আশা-আকাঙ্ক্ষা। বার্নলির লক্ষ্য ছিল প্রিমিয়ার লিগে ওঠা নিশ্চিত করা। আর শেফিল্ডের প্রয়োজন ছিল জয়, যাতে এখনই তাদের প্রিমিয়ার লিগ নিশ্চিত হয় অথবা শেষ দুই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর চাপ বাড়ে। কিন্তু ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর দেখা গেল—লাভবান হয়েছে বার্নলি, আর হতাশ হয়েছে হামজার শেফিল্ড।
প্রথম থেকেই ম্যাচে আক্রমণাত্মক শুরু করে বার্নলি। খেলায় আধিপত্য দেখাতে শুরু করে তারা। ২৮ মিনিটে গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন মিডফিল্ডার জশ ব্রাউনহিল। গোলটি আসে একটি প্রত্যাবর্তিত শট থেকে, যা প্রথমে শেফিল্ড গোলরক্ষক মাইকেল কুপার ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে ব্রাউনহিল নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করেন।
তবে পিছিয়ে পড়েও দ্রুত ম্যাচে ফেরে শেফিল্ড। ৯ মিনিট পর টম ক্যাননের অসাধারণ এক শটে গোল করে সমতায় ফেরান দলকে। এই মুহূর্তে ম্যাচে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ দিকে ঘটে যায় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
৪৪ মিনিটে বার্নলির তরুণ তারকা হানিবাল মেইব্রিকে বক্সের ভেতরে ফাউল করেন শেফিল্ড ডিফেন্ডার আনেল আহমেদহজিচ। রেফারি পেনাল্টি দেন, আর তা থেকে ব্রাউনহিল আবারও গোল করে বার্নলিকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে নেন।
প্রিমিয়ার লিগে বার্নলি-লিডস, শেফিল্ডের অপেক্ষা প্লে-অফে
এই জয়ে বার্নলির পয়েন্ট দাঁড়ায় ৯৪, সমান ম্যাচ খেলে লিডস ইউনাইটেডেরও পয়েন্ট ৯৪। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় লিডস চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের শীর্ষে, বার্নলি দুই নম্বরে।
অন্যদিকে, শেফিল্ড ইউনাইটেড ৪৬ ম্যাচের মৌসুমে এখন পর্যন্ত খেলেছে ৪৪টি ম্যাচ। তাদের পয়েন্ট ৮৬। প্রিমিয়ার লিগে সরাসরি ওঠার সম্ভাবনা এই হারে শেষ হয়ে গেলেও এখনো তাদের সামনে প্লে-অফের পথ খোলা।
প্রিমিয়ার লিগে ওঠার জন্য এখন শেফিল্ড ইউনাইটেডকে প্লে-অফে খেলতে হবে দুটি ম্যাচ, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। প্রতিপক্ষ কারা হবে, তা ঠিক হবে বাকি ম্যাচগুলোর ফলাফলের ওপর।
তবে এখানেও রয়েছে এক হতাশার কাহিনি—শেফিল্ড ইউনাইটেড এই মৌসুমে ২ পয়েন্ট জরিমানার শিকার হয়েছিল আর্থিক নিয়মভঙ্গের কারণে। না হলে তাদের পয়েন্ট হতো ৮৮ এবং এখনো কাগজে-কলমে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে ওঠার সুযোগ টিকে থাকত।
হামজার ভূমিকা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শেফিল্ড ইউনাইটেডের শুরুর একাদশে ছিলেন বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরী। পুরো ম্যাচজুড়ে মাঝমাঠে সংগ্রামী ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে। কখনো বল কাড়ছেন, কখনো পাস বাড়াচ্ছেন, কখনো বা প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দিচ্ছেন।
তবে দল হিসেবে শেফিল্ডের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার মতো না হওয়ায় তাঁর সৃজনশীলতাও অনেক সময় চাপা পড়ে যায়। মৌসুমজুড়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার পরেও শেষপর্যন্ত তার দলকে নিয়ে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে ওঠা সম্ভব হলো না।
এখনো অবশ্য সব শেষ হয়ে যায়নি। যদি শেফিল্ড ইউনাইটেড প্লে-অফের দুই ম্যাচ জিতে যায়, তবে আবারও প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পাবে হামজা চৌধুরী। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও বড় এক অর্জনের মুহূর্ত আসবে সামনে।
লিগ টেবিল ও বাকি সম্ভাবনা
লিডস ও বার্নলি এখন নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচে জয় নিশ্চিত করতে চাইবে, যাতে পয়েন্টে এগিয়ে থেকে প্রিমিয়ার লিগে ওঠা নিশ্চিত করা যায় চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই। লিডস এখনো শীর্ষে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত শিরোপা কার ঝুলিতে যাবে তা নির্ভর করছে গোল ব্যবধান এবং ফলাফলের ওপর।
শেফিল্ড ইউনাইটেডের পরবর্তী ম্যাচ ২৬ এপ্রিল, প্রতিপক্ষ স্টোক সিটি। এই ম্যাচটি হতে পারে তাদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর বড় সুযোগ। এর পরই তাদের নামতে হবে প্লে-অফের লড়াইয়ে।
শেষ কথা
বার্নলি ও লিডসের ফেরার আনন্দ যেমন স্পষ্ট, তেমনি শেফিল্ড ইউনাইটেডের হতাশাও চোখে পড়ে। ফুটবল মানেই তো এমনই—কখনো হাসি, কখনো কান্না। তবে এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি হামজা চৌধুরীদের জন্য। সামনে আছে প্লে-অফ, সামনে আছে প্রিমিয়ার লিগে ওঠার আরেকটি দরজা।
তাদের ভক্তরা নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে শুধু এটুকুই ভাবছেন—”আর দুটি জয়, তাহলেই স্বপ্ন সত্যি।”