ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা, সোনার দামে সর্বকালের রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে আরোপিত বর্ধিত শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে এক নতুন ধরনের অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা আরও তীব্র হয়ে ওঠায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে সোনার দাম পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়।
সোনার দামে রেকর্ড বৃদ্ধি
বুধবার (১৬ এপ্রিল) স্পট মার্কেট বা তাৎক্ষণিক লেনদেনের বাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্সে পৌঁছায় ৩,৩৫৭.৪০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৭৫ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)। যদিও পরে দাম কিছুটা কমে এলেও বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সোনার মূল্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে সোনা ঐতিহ্যগতভাবেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে বাজারে যে ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে সোনার চাহিদা ও মূল্য একই সঙ্গে বেড়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের সতর্ক বার্তা
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ধিত শুল্কনীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভোক্তাপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে। শিকাগোর ইকোনমিক ক্লাবে এক বক্তব্যে তিনি আরও জানান, এই নতুন শুল্কের কারণে চাকরিচ্যুতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বাজারে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ছাপ
SPI অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান স্টিফেন ইন্নেস সোনাকে অভিহিত করেছেন ‘পুরোপুরি জীবনরক্ষাকারী নৌকার মতো’— অর্থাৎ বাজারে এখন এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। তার ভাষায়, “বাণিজ্যনীতির অপ্রত্যাশিত রূপান্তরের কারণে ডলার দুর্বল হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন।”
এদিকে Monex Group-এর বিশ্লেষক জেসপার কল বলেন, “সোনাকে এখন মুদ্রাস্ফীতি এবং সরকারি অবিবেচনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সুরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।”
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সোনার দামের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি ১৯৭৯-৮০ সালের ইরানি বিপ্লবকালীন বাজার পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির মতো। ওই সময় মাত্র দুই মাসের মধ্যে সোনার দাম প্রায় ১২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে যে হারে বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, তাতে অনেকেই আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে সোনা কিনছেন।
ট্রাম্পের পদক্ষেপ এবং প্রতিক্রিয়া
জানুয়ারি ২০২৫-এ দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর ১৪৫% আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। পাল্টা জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য বহু দেশের ওপরও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে এই স্থগিতাদেশ শেষে শুল্ক কার্যকর হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাখ্যা
হোয়াইট হাউস বলছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো—
- দেশীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতকে উজ্জীবিত করা,
- বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরতা কমানো,
- এবং দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে হাজার হাজার কোটি ডলার রাজস্ব আয় করা।
তবে বাস্তব চিত্র বলছে, এই কৌশল বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।