বিশ্ব

নোয়াখালীতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, গাজা ইস্যুতে প্রতিবাদ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বর্বর হামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে নোয়াখালীর সাধারণ মানুষ। আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর নোয়াখালী শহরের টাউন হল মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট নোয়াখালী’-এর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা, সাধারণ মানুষ ও মসজিদের মুসল্লিরা। বক্তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান এবং ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ত ভূমিকায় তীব্র নিন্দা জানান।

বিক্ষোভের বিবরণ: মসজিদ থেকে রাস্তায় জনতার ঢল

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, জুমার নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নোয়াখালী শহরের প্রধান মসজিদগুলো থেকে মুসল্লিরা সড়কে বের হয়ে আসেন। টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়, শহরের মোহাম্মদীয়া মোড় হয়ে পুরো শহরজুড়ে এই মিছিল ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর ২টা নাগাদ প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও স্লোগানে স্লোগানে শহরের রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

মিছিল শেষে মোহাম্মদীয়া মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নেতারা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধে মুসলিম উম্মাহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকায় জোর দাবি জানান।

বক্তব্য: বিশ্ব বিবেকের কাছে জবাবদিহিতার দাবি

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন:

  • ইসহাক খন্দকার, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির
  • মুফতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা জামে মসজিদের খতিব
  • আরমান হোসেন, শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি
  • আরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক
  • সহ আরও কয়েকজন মসজিদের খতিব ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ

বক্তারা বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে যেভাবে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ নিরস্ত্র মানুষের উপর টার্গেটেড হামলা চালাচ্ছে—তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটি শুধু একটি মানবিক সংকট নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা।”

তারা জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তা এবং পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী নীতিরও তীব্র সমালোচনা করেন।

বাংলাদেশে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক

বক্তারা দেশের জনগণকে আহ্বান জানান, যেন তারা ইসরায়েলি পণ্য ও তাদের মিত্রদের পণ্য বর্জন করেন। তারা বলেন, “আমাদের অর্থ যেন কোনোভাবেই ইসরায়েলি অস্ত্র কেনায় ব্যবহৃত না হয়।”

এ সময় ‘বয়কট ইসরায়েলি পণ্য’, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ কিলিং চিলড্রেন’—এমন নানা স্লোগান দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: পুলিশের কড়া নজরদারি ও র‌্যাবের টহল

নোয়াখালী সুধারাম থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও শহরে নিয়মিত টহল দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকার ছিল। আয়োজকরা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।”

গাজা পরিস্থিতি: ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬ মাস ধরে লাগাতার বোমা বর্ষণ করছে। শুধু গতকালই ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজা উপত্যকার ৯০ শতাংশ জনগণ এখন মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। খাবার, পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধ সংকটে সেখানে মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশজুড়ে প্রতিবাদ: আরও শহরে কর্মসূচি

নোয়াখালীর মতো আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন শহরেও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দেশের বড় বড় মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

উপসংহার: বিশ্ববিবেক জাগ্রত হোক, ফিলিস্তিনের পাশে থাকুন

নোয়াখালীতে আজকের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখিয়ে দিয়েছে—বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে, থাকবে। ইসরায়েলি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জেলা থেকেও সোচ্চার প্রতিবাদ উঠে আসছে।

এই প্রতিবাদ কেবল ক্ষোভ প্রকাশ নয়, বরং এটি একটি মানবিক অবস্থান। পৃথিবীর যে কোন জায়গায় যখন অন্যায় হয়, তখন তা প্রতিরোধে এক হয়ে দাঁড়ানোই মানবতার বড় পরিচয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button