কর্মসংস্থান

২০ রমজানের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প শ্রমিকদের ঈদুল ফিতরের আগে বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধের দাবি জানিয়েছে। তারা একই সঙ্গে ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন পরিশোধেরও আহ্বান জানিয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি ও কর্মসূচি

গত ১৮ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম চৌধুরী, সহ-সভাপতি অঞ্জন দাসসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবি জানান। এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ পরিবহন সেবা চালু এবং ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধেরও আহ্বান জানান তারা।

সমাবেশে বক্তারা উল্লেখ করেন, অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এবারও ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। মিরপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শ্রমিক অঞ্চলে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। মজুরি-বোনাস না দিয়ে উল্টো শ্রমিকদের ছাঁটাই করা বা কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, ঈদ এলেই পরিবহন খাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়। ভাড়া বৃদ্ধির সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ পরিবহন সেবা চালু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

অন্যদিকে, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রও ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধের দাবি জানিয়েছে। তারা ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন পরিশোধেরও আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে এই দাবি তুলে ধরে।

সরকারের পদক্ষেপ ও নির্দেশনা

শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনাদি ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর পূর্ববর্তী শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ছুটি সংক্রান্ত পর্যালোচনার জন্য ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৮৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সরকার পক্ষ, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের সব বকেয়া, বেতন ও বোনাস পরিশোধ, ঈদে শ্রমিকদের ছুটি, শ্রমঘন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শ্রমঘন এলাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিসিবি পণ্য বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা ও সতর্কতা

শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ না হলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, ২০ রোজার মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক কর্মসূচি থেকে স্কপের যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, “অঙ্গীকার পূরণ না করার কারণে শ্রমিক যদি ফুঁসে ওঠে, স্কপ শ্রমিকদের পাশে থাকবে। প্রয়োজনে লাগাতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণি তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

পরিবহন সেবা ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণের দাবি

ঈদ উপলক্ষে পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। তারা উল্লেখ করেছেন, ঈদ এলেই পরিবহন খাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়, যা শ্রমিকদের জন্য বাড়তি কষ্টের কারণ হয়। তাই, ভাড়া বৃদ্ধির সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ পরিবহন সেবা চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি ও সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সময়মতো বেতন ও বোনাস পরিশোধ তাদের ন্যায্য অধিকার। ঈদুল ফিতরের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবের আগে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ না হলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা শিল্পখাতের স্থিতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, শ্রমিকদের সময়মতো বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করতে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এছাড়া, পরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ সেবা চালুর

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button