ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক

আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ ২০২৫) বেইজিংয়ে চীন, রাশিয়া ও ইরানের কূটনীতিকদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা আলোচনা নতুন করে শুরু করার আশা প্রকাশ করা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি
২০১৫ সালে ইরান চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করেছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে দায়িত্বপালনকালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
ওয়াশিংটনের সরে যাওয়ার পরও এক বছর ধরে তেহরান ওই চুক্তি মেনে চলেছিল। কিন্তু পরে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে, যার ফলে চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
বৈঠকের উদ্দেশ্য
বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আশা করে যে, আজকের আলোচনা নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় তৎপরতা দৃঢ় করবে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভিতে বলা হয়েছে, তিন কূটনীতিক ইরানের পারমাণবিক ইস্যু এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছেন। বৈঠকে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওজু, রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্পের নতুন আহ্বান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং ইরানের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতে রাজি নয় তেহরান। চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইরান যদি প্রত্যাখ্যান করে তবে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
গতকাল বৃহস্পতিবার তেহরান জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের চিঠিটি পর্যালোচনা করছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, “শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচিত, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, চাপ ও হুমকিমুক্ত থাকলে এবং জনগণের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার নিশ্চয়তা পেলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবেন তাঁরা।
চীন, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে এই বৈঠক আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের অবস্থান এই আলোচনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।