বিশ্ব

লন্ডন সম্মেলনে ইউক্রেনের পক্ষে চার বিষয়ে মতৈক্য

ইউক্রেন সংকট মোকাবিলায় লন্ডনে আয়োজিত সম্মেলনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ল্যাংকেস্টার হাউসে আয়োজিত এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা অংশ নেন।

সম্মেলনে গৃহীত চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:

১. সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি: যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো।

  1. শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি: ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শান্তি আলোচনার যেকোনো টেবিলে ইউক্রেনকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
  2. রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আক্রমণ প্রতিরোধ: ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
  3. সুরক্ষা জোট গঠন: ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন করা হবে, যাতে দেশটির নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত হয়।

যুক্তরাজ্যের ১৬০ কোটি পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা

সম্মেলনে কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাজ্য ১৬০ কোটি পাউন্ড সহায়তা দেবে। এই অর্থের মাধ্যমে পাঁচ হাজারেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে, যা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হবে।

সম্মেলনের মূল প্রতিক্রিয়া

সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, “ভালো ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত থাকা জরুরি।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁও ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলমান। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সহায়তাকারী দেশ থাকলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন আসার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক উত্তপ্ত পরিবেশে শেষ হয়। বৈঠকের পর কোনো চুক্তি হয়নি এবং নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনও বাতিল করা হয়। হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেনের মিত্রদেশগুলো লন্ডন সম্মেলনে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, “আমরা তিন বছর ধরে চলমান একটি সংঘাতের মধ্যে রয়েছি। এখন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে এগোতে হবে।” তিনি আরও জানান, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্মেলনের ভবিষ্যৎ প্রভাব

লন্ডন সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা, রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, এবং একটি সুরক্ষা জোট গঠন – এসব উদ্যোগ ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, মস্কো লন্ডন সম্মেলনের ওপর গভীর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি এবং উপযুক্ত সময়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।”

লন্ডন সম্মেলনের এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পরই বোঝা যাবে, ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে। ইউরোপীয় মিত্রদের জোরদার সমর্থন পেলে ইউক্রেন তার প্রতিরক্ষা শক্তি আরও মজবুত করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button