জাতিসংঘ ভোটে রাশিয়া বিতর্ক, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ বিভক্ত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে উত্থাপিত তিনটি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভক্তি দেখা গেছে।
রাশিয়াকে দায়ী করতে অস্বীকৃতি
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করতে রাজি হয়নি, যা ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করতে হবে, যা ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের হতাশ করেছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউরোপ-সমর্থিত ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মস্কোর আগ্রাসন বন্ধ এবং অবিলম্বে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের দাবিতে উত্থাপিত ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রও।
যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, যেখানে রাশিয়াকে আগ্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে ফ্রান্সের নেতৃত্বে সংশোধনী প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের তৃতীয় বার্ষিকীতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র তার মূল খসড়াতে ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদ অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাধর এবং সেখানে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক। ১৫ সদস্যের পরিষদে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১০টি, কিন্তু ৫টি ইউরোপীয় দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে বলেন, “রাশিয়ার ছড়ানো অপতথ্যের জগতে বসবাস করছেন।”
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সংকট
কূটনৈতিক এ টানাপোড়েন চলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। আগামী বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য জাতিসংঘে তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
গতকাল সাধারণ অধিবেশনে উত্থাপিত ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের পক্ষে ৯৩টি ভোট পড়েছে, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৮টি এবং ৬৫ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কিছুটা কমেছে।
জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিভক্তি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই বিভক্তি ভবিষ্যতে সম্পর্কের উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে।