বানিজ্য

ধস নামা পুঁজিবাজার নিয়ে আজ বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

চলমান পুঁজিবাজার সংকট নিয়ে আজ রোববার দুপুরে বৈঠকে বসছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর যমুনা এলাকায় তার সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এই বৈঠককে বাজার সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখলেও, অংশগ্রহণকারীদের সীমিত উপস্থিতি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

গত কয়েক মাসে লাগাতার দরপতন, বাজার মূলধনের বিশাল হ্রাস এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভে জর্জরিত দেশের শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এটি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

বৈঠকে কারা থাকছেন?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) থেকে গত ৬ মে এই বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়।

উপস্থিত থাকবেন—

  • অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
  • প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী
  • বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ
  • এফআইডির সচিব নাজমা মোবারেক

এই বৈঠকেই মূলত চলমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বর্তমান কমিশনের কার্যক্রম, বিনিয়োগকারীদের দাবিদাওয়া ও বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার কৌশল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

পুঁজিবাজারে ধস: কী ঘটেছে গত কয়েক মাসে?

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর ২০২৫ সালের আগস্টে বাজারে সাময়িক স্থিতি ফিরলেও, নতুন কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে বাজার আবারো ধসের মুখে পড়ে।

  • শুধুমাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বাজার মুলধন হারিয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
  • ডিএসইএক্স সূচক কমেছে প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট।
  • একের পর এক কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখো বিনিয়োগকারী।

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বর্তমান বিএসইসি কমিশনের সিদ্ধান্তহীনতা, বাজার বিশ্লেষণ ছাড়া রেগুলেটরি হস্তক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খল পরিবেশ এই ধসের অন্যতম কারণ।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার রাজপথে নেমেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তাঁদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ
  • বাজারে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন
  • রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত কমিশন
  • ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য পুনরুদ্ধার তহবিল গঠন

বিনিয়োগকারীদের মতে, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে শুধু বৈঠক নয়, প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ।

কমিশনের অভ্যন্তরীণ সংকট

বাজার ধসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিজের ভেতরেও পড়েছে শৃঙ্খলাহীন অবস্থায়।

  • সাম্প্রতিক সময়ে ২১ জন কর্মকর্তা বরখাস্ত
  • ২ জনকে শোকজ নোটিশ প্রদান
  • কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা

এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসির নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাজারসংশ্লিষ্ট মহলে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি: অংশগ্রহণ বাড়ানো হোক

আজকের বৈঠকে মাত্র চারজন শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি উপস্থিত থাকছেন। এতে করে অনেকেই মনে করছেন, মূল সমস্যাগুলোর পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসবে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে অন্তত নিম্নোক্ত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব জরুরি ছিল—

  • বাংলাদেশ ব্যাংক
  • অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
  • ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)
  • ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই)
  • ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন

এছাড়া, কিছু প্রবীণ বাজার বিশ্লেষক ও অধ্যাপককে সংযুক্ত করা হলে সমাধানধর্মী আলোচনার সুযোগ আরও বাড়তো বলে অনেকে মনে করেন।

বিশ্লেষকদের মত: সংকট সমাধানে ৫টি জরুরি পদক্ষেপ

দেশের বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন এমন কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকের মতে, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিচের ৫টি পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করা জরুরি:

  1. স্বাধীন ও দক্ষ বিএসইসি পুনর্গঠন
  2. আইসিবির হস্তক্ষেপমূলক বাজার স্থিতিশীলতা ফান্ড চালু করা
  3. বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা
  4. শেয়ার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো
  5. বাজার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা

আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কি?

যদিও আজকের বৈঠক বাজার উন্নয়নের জন্য একটি জরুরি উদ্যোগ, তবে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সীমিত উপস্থিতির কারণে এই বৈঠক থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

তবে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই বৈঠক বাজার পরিস্থিতির ব্যাপক মূল্যায়নের একটি সূচনা হতে পারে এবং ভবিষ্যতে বড় পরিসরের অংশগ্রহণে আরো কার্যকর বৈঠক আহ্বান করা হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button