খনিজ চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খনিজ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, দুদেশের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত গঠনমূলক হয়েছে এবং চুক্তির বিস্তারিত সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, শিগগিরই চুক্তি সই হবে এবং ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা এতে স্বাক্ষর করবেন।
খনিজ চুক্তি: ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় সুযোগ
এ মাসের শুরুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে বর্তমানে, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনায় যে গঠনমূলক সাফল্য এসেছে, তা দুই দেশের জন্যই একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করছে। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, চুক্তি দ্রুত সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং শোষণের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়ার আক্রমণ এবং যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি ইউক্রেনকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ দিতে পারে।
ইউক্রেনের সংকট এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে, ইউক্রেন ব্যাপক সামরিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। ইউক্রেনের সরকারকে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন ছিল, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থন পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, যাতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের তিন বছর পূর্ণ হওয়ার দিন, কিয়েভে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে ইউরোপের বেশ কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন এবং অনেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে ইউক্রেনকে আরও সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ দ্রুত বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
রুশ শান্তিচুক্তির আহ্বান
ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া শান্তিচুক্তির আহ্বান জানিয়ে আসছে। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তি চায়। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
ইউক্রেনের পক্ষে, এই সময়টি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে। তবে ইউক্রেনের সরকার বিশ্বজুড়ে সমর্থন পাওয়ার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কাজ করছে। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং খনিজ চুক্তির আলোচনা ইউক্রেনের পক্ষে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় নেতাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেন ইউক্রেনের প্রতি আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ আরও দ্রুত করতে হবে। এর পাশাপাশি, ইউরোপের ভবিষ্যতের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। এই সংকট ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলেছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউক্রেনের শীর্ষ সম্মেলনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার হাতে সব কার্ড নেই, এবং তার মতে, রাশিয়ার প্রতিরোধ করার সক্ষমতা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। এটি ইউক্রেনের জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং রাশিয়ার অবস্থানের দুর্বলতা ইউক্রেনের পক্ষের শক্তি বাড়াচ্ছে।
শান্তির পথে ইউক্রেনের অঙ্গীকার
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্মেলনে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, “পুতিন আমাদের শান্তি দেবেন না, কোনো কিছুর বিনিময়ে তা পাওয়া যাবে না। আমাদের শক্তি, প্রজ্ঞা, ঐক্য এবং সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করতে হবে।” জেলেনস্কির এই বক্তব্য দেশটির জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। ইউক্রেন শান্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, কিন্তু এটি তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামও অব্যাহত রাখবে।
চূড়ান্ত পর্যায়ের চুক্তি এবং ভবিষ্যত
ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনার ভাষ্যমতে, চুক্তির সব বিস্তারিত চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং শিগগিরই তা সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তি শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ সম্পদের সরবরাহের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি ইউক্রেনের কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে, যা যুদ্ধকালীন সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।
চুক্তির সইয়ের পর, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তার ভূমিকা আরও দৃঢ় হবে। পাশাপাশি, এই চুক্তি দুটি দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।