গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বস্ত্রকলের মালিকরা

বাংলাদেশের বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বিটিএমএর নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি মো. আবুল কালাম, সালেউদ জামান খান, পরিচালক রাজীব হায়দারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত
বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে জ্বালানি সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তীব্র গ্যাস সংকটের ফলে বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশীয় বস্ত্রকলগুলো ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা মেটায় এবং বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের উচ্চমূল্য ও সরবরাহের অনিশ্চয়তা শিল্প খাতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
সুতা আমদানি নিয়ন্ত্রণের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর নেতারা গ্যাস সংকটের পাশাপাশি আমদানি সংক্রান্ত সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেন। তারা বলেন, ভারত থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় আমদানির ফলে দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমাদের স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসগুলোতে যথাযথ অবকাঠামো ও পরীক্ষামূলক সরঞ্জাম নেই। ফলে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কম দামে সুতা আমদানি করা হচ্ছে, যা সরকারকে রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি দেশীয় শিল্পকে সংকটে ফেলে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের বস্ত্রকলগুলোয় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার সুতা মজুত আছে। আমরা ইতিমধ্যে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আমরা চাই, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করেই আমদানি করা হোক এবং ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হোক।”
এলডিসি উত্তরণের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ার ফলে অনেক সুবিধা হারাচ্ছে, যা বস্ত্র খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা কমে গেছে, ফলে বৈদেশিক প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, এই উত্তরণের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হোক এবং শিল্প খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি: বড় সংকটের আশঙ্কা
বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, “বর্তমানে দেশে মাটির নিচে যথেষ্ট গ্যাস মজুত থাকার পরও কেন এলএনজি আমদানি করে ব্যয়বহুল গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। যদি প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা পর্যন্ত করা হয়, তবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই সরকার শিল্পের কথা বিবেচনা করে গ্যাসের দাম ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনুক এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুক। তা না হলে শিল্প কারখানাগুলো টিকে থাকতে পারবে না।”
উপসংহার
বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু গ্যাস সংকট, আমদানি নীতি, এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মিলিয়ে এ খাত আজ সংকটের সম্মুখীন। বিটিএমএর নেতারা স্পষ্টতই সরকারের কাছে নীতিগত সমর্থন চেয়েছেন, যা না হলে দেশের বস্ত্র শিল্প মারাত্মক বিপদের মুখে পড়তে পারে।
তারা সরকারের কাছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা, ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা এবং এলডিসি উত্তরণের শর্ত কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। এখন দেখার বিষয়, সরকার তাদের দাবির প্রতি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়।