অর্থনীতি

ভারত ও চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারত ও চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি জানিয়েছেন যে, ভারত যেভাবে শুল্ক আরোপ করে, যুক্তরাষ্ট্রও সেই একই হারে শুল্ক আরোপ করবে। তিনি আরও জানান, এতদিন তা করা হয়নি, তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রস্তুত হচ্ছে।

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ঘোষিত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ কি?

সম্প্রতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় বাণিজ্য পরামর্শক সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, দুই দেশের শুল্কব্যবস্থা পুনর্গঠন করা উচিত। তাদের মতে, চুক্তির পরিবর্তে ভারত যদি কিছু পণ্যের উপর শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনে এবং যুক্তরাষ্ট্রও যদি একই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করে, তাহলে উভয় দেশের জন্যই সুবিধাজনক হবে।

নীতিনির্ধারণী সংস্থা নীতি আয়োগের প্রধান নির্বাহী বিভিআর সুব্রামানিয়াম বলেছেন, ভারতের শুল্ক কমানো উচিত, যাতে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। তবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তি হবে “মাদার অব অল ডিলস” অর্থাৎ সব চুক্তির মধ্যে সর্বোত্তম চুক্তি।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রভাব

প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতীয় পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ভারতের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে?

বিশ্বখ্যাত মান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস বলছে, ভারতের অর্থনীতি মূলত অভ্যন্তরীণ চাহিদা নির্ভর হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব সীমিত থাকবে। তারা পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী দুই বছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৬.৭% থেকে ৬.৮% হতে পারে।

তবে গোল্ডম্যান স্যাক্স এই বিষয়ে আরও সতর্ক। তারা জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ঠিক কোন পণ্যের উপর এবং কী পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে, তার ওপর নির্ভর করবে ভারতের রপ্তানি ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আসার পর স্পষ্ট হবে, ভারতের কতটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভারতের করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বেশ কয়েকটি শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি সংকটে পড়তে পারে।

জিটিআরআইয়ের মতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ৯০% শিল্পপণ্যের উপর শুল্ক কমাতে পারে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও, চুক্তির চেয়ে কম ক্ষতি সাধন করবে। তবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেছেন, ভারত এখনো তার কৌশল চূড়ান্ত করেনি এবং আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই জটিল। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি অনেক ক্ষেত্রেই কঠোর এবং আক্রমণাত্মক। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার কৌশলগতভাবে একটি মধ্যপন্থা নিতে পারে যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় থাকে।

আগামী কয়েক মাসে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই শুল্ক ইস্যু আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত দুই দেশ একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, যেখানে উভয় পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর বাণিজ্যনীতি এবং ভারতের স্বার্থরক্ষার অবস্থানের মধ্যে সমন্বয় করা কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button