
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের বড় হার এবং ধীর রান তাড়া নিয়ে শুরু থেকেই নানা সমস্যায় পড়েছিল পাকিস্তান। গতকাল, ২০ ফেব্রুয়ারি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তান ৩২০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৬০ রানে হার মেনে নেয়।
ধীর রান তাড়ার শুরু
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানকে শুরু থেকেই বেশ ধীর গতিতে খেলতে দেখা যায়। শুরুতেই সৌদ শাকিলকে হারিয়ে তারা ব্যাকফুটে চলে যায়। প্রথম ৭ ওভারের শেষে পাকিস্তান মাত্র ১ উইকেটের বিনিময়ে ১৪ রান করতে পেরেছিল। পরবর্তীতে ১০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২ রান তোলা ছিল তাদের পরবর্তী অবস্থান। এমন নড়বড়ে শুরুর পর তাদের রান তাড়ার গতি আর বাড়ানো সম্ভব হয়নি, বরং, প্রথম ২৫ ওভারের মধ্যে পাকিস্তান ১০৪টি ডট বল খেলে, যা ম্যাচের ফল প্রভাবিত করে।
শুরুতেই চাপে পাকিস্তান
পাকিস্তানের বাটিংয়ের ধরন ছিল শুরু থেকেই পরিকল্পনার বাইরে। সৌদ শাকিলকে ওপেনিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল একটি ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে পাকিস্তান দ্রুতই উইকেট হারাতে থাকে। ফখর জামান মাঠে ব্যথা পাওয়ায় ৩০ ওভার মাঠের বাইরে ছিলেন, ফলে তার ব্যাটিং শুরু হতে দেরি হয়। প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে ফখর জামান মাঠে নামতে না পারায় পাকিস্তান হতাশাজনকভাবে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২ রান তোলে। মোহাম্মদ রিজওয়ানও শুরুতে ধীর গতিতে ব্যাটিং শুরু করেন, যা পাকিস্তানকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। দশম ওভারের শেষ বলে গ্লেন ফিলিপসের দুর্দান্ত ক্যাচে রিজওয়ান আউট হয়ে গেলে পাকিস্তান তার দ্বিতীয় উইকেট হারায়। এই সময়ে তাদের রান ছিল মাত্র ২২।
ফখরের ব্যথা, বাবরের নিরবতা
পরবর্তী সময়ে ফখর জামান ব্যথার কারণে বেশিক্ষণ মাঠে টিকতে পারেননি। ২১তম ওভারে আউট হয়ে ফিরে যান ৬৯ রানে। পাকিস্তানের দলের আশা ছিল বাবর আজম ও আগা সালমানের উপর। দুইজনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ওঠে। তবে, ব্যাটে ভালো শুরু সত্ত্বেও বাবর দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করতে না পেরে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬৪ রান করে আউট হন।
খুশদিলের চেষ্টা ব্যর্থ
তবে, পাকিস্তান তার পরের খোঁজে আশা রাখে খুশদিল শাহের উপর। সাতে নামা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৪৯ বলে ৬৯ রান করে পাকিস্তানের রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে তার চেষ্টার পরও পাকিস্তান বড় হার নিশ্চিত করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৮৪ বল খেলে পাকিস্তান ১৬২টি ডট বল খেলে ম্যাচটি হারিয়ে দেয়।
নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত ব্যাটিং
পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের উইল ইয়াং এবং টম ল্যাথাম শক্ত অবস্থানে ছিলেন। উইল ইয়াং ১১৩ বলের সাহায্যে ১০৭ রান করেন, এবং টম ল্যাথাম অপরাজিত ১০৪ বলের সাহায্যে ১১৮ রান করেন। ৩০০ রানের পরে, নিউজিল্যান্ড ম্যাচে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করে তোলে। ম্যাচের শেষদিকে গ্লেন ফিলিপসের শক্তিশালী ব্যাটিং দলের রান ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। তিনি ৩৯ বলে ৬১ রান করেন এবং মাত্র ৫০তম ওভারের মধ্যে আউট হন।
ফলস্বরূপ নিউজিল্যান্ডের বড় জয়
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৩২০ রান। পাকিস্তানকে ৬০ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে তারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করেছে বড় জয় নিয়ে।
পাকিস্তানের টেকনিক্যাল সমস্যা
পাকিস্তান তার ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা দেখিয়েছে। ডট বলের পরিমাণ অত্যাধিক ছিল, এবং দলের ইনিংসের শুরু থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল। তাদের মিডল অর্ডারও বেশ নড়বড়ে ছিল এবং শেষ পর্যন্ত খুশদিল শাহ ছাড়া কেউই ম্যাচে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেননি।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ
এ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং দল যেমন শক্তিশালী ছিল, পাকিস্তানের ব্যাটিং দল অনেক দুর্বল মনে হয়েছে। তাদের রান তাড়া করার কৌশল এবং পিচে রান তোলার গতির অভাব পাকিস্তানের ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। দলের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতার অভাব এবং অপ্রত্যাশিত উইকেট হারানোর ফলে তারা বড় হার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।