বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা, প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ উইকেটে জয় পাকিস্তানের

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান শাহিনসের (পাকিস্তান ‘এ’ দল) বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান শাহিনস মাত্র ৪১ ওভারেই জয় নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ (৪৪), সৌম্য সরকার (৩৫) ও তানজিম হাসান সাকিব (৩০) কিছুটা লড়াই করলেও দলীয় ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডে মাত্র ২০২ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।
ম্যাচের সারসংক্ষেপ
ম্যাচ: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান শাহিনস, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ প্রস্তুতি ম্যাচ
ভেন্যু: আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি, দুবাই
ফলাফল: পাকিস্তান শাহিনস ৭ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ: ৩৮.২ ওভারে ২০২ (সব উইকেট হারিয়ে)
পাকিস্তান শাহিনস: ৪১ ওভারে ২০৬/৩ (লক্ষ্য ২০৩ রান)
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মাত্র ৬ রান করে বোল্ড হন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (০.৩ ওভারে ৬ রান)। এরপর শান্ত (১২) ও সৌম্য সরকার (৩৫) দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও দলীয় ৫০ রানের মধ্যে দুজনেই ফিরে যান।
মেহেদী হাসান মিরাজ (৪৪) এবং তাওহীদ হৃদয় (১৯) দলকে ১০০ রানের গণ্ডি পার করালেও মিডল অর্ডারের ভয়াবহ ব্যর্থতায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের হাতে চলে যায়। মুশফিকুর রহিম (৭) ও জাকের আলী (৪) বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। শেষদিকে তানজিম সাকিবের ৩০ রান ও নাসুম আহমেদের ১৫ রানের ক্যামিও ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ ২০০ রানের গণ্ডি পার করে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্স:
- মেহেদী হাসান মিরাজ – ৪৪ (৫৩ বল)
- সৌম্য সরকার – ৩৫ (৩৪ বল)
- তানজিম হাসান সাকিব – ৩০ (২৭ বল)
- তাওহীদ হৃদয় – ১৯ (৩৩ বল)
- মুশফিকুর রহিম – ৭ (১৪ বল)
- নাজমুল হোসেন শান্ত – ১২ (২১ বল)

পাকিস্তান শাহিনসের দুর্দান্ত বোলিং
পাকিস্তান শাহিনসের বোলাররা শুরু থেকেই চাপ সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে লেগ-স্পিনার উসামা মীর একাই ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন। মুবাশ্বির খান (২ উইকেট), মুসা খান (১ উইকেট), সুফিয়ান মুকিম (১ উইকেট) এবং আলি রেজা (১ উইকেট) গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশকে ধাক্কা দেন।
পাকিস্তানের বোলিং পারফরম্যান্স:
- উসামা মীর: ৪/৪৩
- মুবাশ্বির খান: ২/৪২
- মুসা খান: ১/১৬
- সুফিয়ান মুকিম: ১/৩২
- আলি রেজা: ১/৪০
পাকিস্তানের সহজ জয়
২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান শাহিনস শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়লেও শেষ পর্যন্ত সহজ জয় তুলে নেয়। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ৪২ রানে ২ উইকেট হারায় তারা। তবে মোহাম্মদ হারিস (৭৩*) এবং আবদুল সামাদ (৫২) ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
পাকিস্তানের ব্যাটিং পারফরম্যান্স:
- মোহাম্মদ হারিস: ৭৩* (৮৭ বল)
- আবদুল সামাদ: ৫২ (৬০ বল)
- ওমাইর ইউসুফ: ৩৪ (৪১ বল)
- হাসিবুল্লাহ খান: ১৮ (২৩ বল)
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিম হাসান সাকিব প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট নেন। তবে কেউই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে পারেননি।
বাংলাদেশের জন্য এই প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল মূল আসরের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ। তবে ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই তাদের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের ব্যাটিং বিপর্যয় ও বোলারদের ধারহীন পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অধীনে বাংলাদেশকে এখন দ্রুতই তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে, কারণ ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে মিডল অর্ডারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। বোলিং বিভাগে আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা দরকার, বিশেষ করে স্পিনারদের থেকে আরও কার্যকর বোলিং আশা করা হচ্ছে।টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ম্যাচের গতি নষ্ট করেছে, তাই ওপেনিং জুটির উন্নতি করতে হবে।