জাতীয়

আজ পবিত্র শবে বরাত, সারাদেশে ধর্মীয় মর্যাদায় পালিত হবে সৌভাগ্যের রজনী

আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। ইসলাম ধর্মে এ রাতকে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে গণ্য করা হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, এই রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন, নফল নামাজ আদায় করেন, কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।

শবে বরাতের ধর্মীয় গুরুত্ব ও তাৎপর্য

শবে বরাত ইসলাম ধর্মে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ রাত, যা লাইলাতুল বরাত বা ‘মুক্তির রজনী’ নামে পরিচিত। এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

১. আল্লাহর অশেষ রহমত ও ক্ষমার রাত

শবে বরাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন এবং অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে দেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন—‘কেউ কি ক্ষমাপ্রার্থী আছে? আমি তাকে ক্ষমা করব। কেউ কি রিজিক চায়? আমি তাকে রিজিক দেব। কেউ কি বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তি দেব।’” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)

২. তাকদির বা ভাগ্যলিপির চূড়ান্ত অনুমোদন

কিছু ইসলামি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শবে বরাতের রাতে বান্দার আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ, কার মৃত্যু হবে, কে কী পরিমাণ রিজিক পাবে, কার কী বিপদ আসবে—এসব বিষয় আল্লাহ এই রাতে ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন।

আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
“সেই রাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।” (সূরা আদ-দুখান: ৩-৪)

৩. বিশেষ ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ

শবে বরাতের অন্যতম গুরুত্ব হলো এটি একটি আত্মশুদ্ধির রাত। এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে বান্দারা নিজেদের পাপমুক্ত করতে পারেন এবং আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ পান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“এই রাতে আল্লাহ মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত সকলের গুনাহ মাফ করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)

৪. দোয়া ও মাগফিরাতের বিশেষ রাত

এ রাতে মুসলমানরা বিশেষভাবে নিজেদের, পরিবারের, দেশ ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনায় দোয়া করেন। আল্লাহ বান্দার প্রতিটি আকুতি গ্রহণ করেন এবং গুনাহগারদের জন্য ক্ষমার দরজা খুলে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী

শবে বরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশ-বিদেশের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই মহিমান্বিত রজনী মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর অসীম রহমত, বরকত ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে আসে। এই রাতে আমরা নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “শবে বরাতের শিক্ষা আমাদের অন্যায়-অপরাধ ও হানাহানি পরিহার করে ন্যায়-নীতি ও মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগের শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা এই পবিত্র রাতে সৎপথে চলার প্রতিজ্ঞা করি।”

বিশেষ আয়োজন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান

শবে বরাত উপলক্ষে দেশের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররমে বিশেষ আয়োজন:

  • সন্ধ্যা ৬:৩৫: শবে বরাতের শিক্ষা ও করণীয় নিয়ে ওয়াজ
  • রাত ৭:১০: শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা
  • রাত ৮:৫০: শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে ওয়াজ
  • রাত ২:১৫: নফল ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা
  • ভোর ৫:৫০: আখেরি মোনাজাত

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

শবে বরাতের করণীয় ইবাদত

  • নফল নামাজ: দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়
  • কোরআন তেলাওয়াত: বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা
  • দোয়া ও তওবা: পাপমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা
  • জিকির ও দরুদ পাঠ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বেশি বেশি বলা
  • দান-সদকা: দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করা

সরকারি ছুটি ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শবে বরাত উপলক্ষে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

এই মহিমান্বিত রাতে মুসলমানরা আল্লাহর রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের আশায় রাতব্যাপী ইবাদতে মগ্ন থাকবেন এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করবেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button