এই ভূত সেই ভূত নয়

নুহাশ হুমায়ূনের নতুন অ্যানথোলজি সিরিজ “২ষ” আমাদের সামনে হাজির করেছে অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তু এবং দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এই সিরিজে ভয়ের মনস্তত্ত্বকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শকদের মনে এক ভিন্ন ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।
গল্পের মূল বিষয়বস্তু
নুহাশের গল্পগুলোতে অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোকে দেশের বাস্তবতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সিরিজের প্রথম মৌসুমে ভূতের ভয় দেখানো হয়েছিল, কিন্তু এবার তিনি ভয়ের অন্য রকম এক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছেন। “২ষ” সিরিজটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট উৎসবে মনোনীত হয়েছে।
প্রথম গল্প: ‘ওয়াক্ত’
প্রথম গল্প “ওয়াক্ত” পাঁচ বন্ধুর গল্প। আমাদের সমাজে পাপ কাজ যেন বিনোদনের বিকল্প হয়ে উঠেছে। কেউ ভাবছে না পরিণতি নিয়ে। কিন্তু পাপ কি কখনো পিছু ছাড়ে? নাকি বদলা নিতে ফিরে আসে ভয়ংকর রূপে? এই গল্প পাপের ভয়াবহ পরিণতির চিত্র তুলে ধরে।
দ্বিতীয় গল্প: ‘ভাগ্য ভালো’
দ্বিতীয় গল্প “ভাগ্য ভালো” একটি জ্যোতিষীর কাহিনী। টিয়া পাখি নিয়ে রাস্তায় বসে তিনি মানুষের ভাগ্যগণনা করেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে ভাইরাল হয়ে যান তিনি। এরপর লোভের খপ্পরে পড়ে ভাগ্য নিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করেন। এই গল্পে ভাগ্যের হাতবদলকে দেখানো হয়েছে এক সুবিশাল অট্টালিকার মাধ্যমে, যেখানে অন্যের ভাগ্য শোষণ করা হয়।
তৃতীয় গল্প: ‘অন্তরা’
“অন্তরা” গল্পে শয়তানের সঙ্গে সংসার করার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এখানে অশুভ শক্তির নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে শয়তানকে দেখানো হয়েছে। বাস্তব, কল্পনা এবং পৌরাণিক কাহিনির মধ্যে ঘোরপাক খাওয়া এক গোলকধাঁধা যেন এই গল্পটি।
চতুর্থ গল্প: ‘বেসুরা’
“বেসুরা” গল্পটি একটি আজব গ্রামের কাহিনী। জাদুর স্পর্শে যে গ্রামের সব লোক মেধাবী হয়ে জন্ম নিয়েছে, কিন্তু সেখানে জন্ম নেওয়া একটি ছোট্ট মেয়ের গলায় কোনো সুর নেই। সবাই তাকে অপয়া ভাবতে শুরু করে। গ্রামের মোড়ল গাতক বলেন, সূর্যাস্ত পর্যন্ত গান গাইতে না পারলে বাকি জীবন কসাইর ঘরে কাটাতে হবে। ভাগ্যচক্রে এক ডাইনির দেখা পায় বেসুরা মেয়েটি।
গল্পগুলোর যোগসূত্র
এই চারটি গল্পের মধ্যে নীতিবোধ, শয়তান এবং মানুষের টানাপোড়েনের যোগসূত্র রয়েছে। পাপবোধ, বিশ্বাস এবং বিস্মরণ যেন শিকড় বিস্তার করেছে “ওয়াক্ত”, “ভাগ্য ভালো”, “অন্তরা” এবং “বেসুরা” নামের গল্পগুলোতে। একই সঙ্গে রাজনীতি এবং পুঁজিবাদী সমাজের সমালোচনা করা হয়েছে।
অভিনয়ের দিক
সিরিজের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। মোশাররফ করিম, আফজাল হোসেন, কাজী নওশাবা আহমেদ, সুমাইয়া শিমু এবং জয়া আহসান—সবাই তাদের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে মোশাররফ করিমের জ্যোতিষী চরিত্রটি দর্শকদের মনে ভয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
“২ষ” সিরিজটি শুধু ভয়ের গল্প নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের নানা দিককে তুলে ধরে। নুহাশ হুমায়ূন তার গল্পের মাধ্যমে দর্শকদের মনে এক নতুন ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। এই সিরিজটি দেখার পর দর্শকরা বুঝতে পারবেন, এই ভূত সেই ভূত নয়, বরং মুখোশের আড়ালে থাকা ভূত।