বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ‘শহীদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ’-এর ব্যানারে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনকারীরা অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুর মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না, বরং এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় তাঁরা তৎকালীন কারা কর্তৃপক্ষ এবং বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে দায়ী করে তাঁর বিচার ও মৃত্যুদণ্ড দাবি তোলেন। এই দাবিটি দেশের কারা ব্যবস্থার সংস্কার এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
মানববন্ধন ও মূল অভিযোগ
‘শহীদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পিন্টুর সমর্থকরা অংশ নেন। বক্তাদের মূল অভিযোগ ছিল পিন্টুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে:
- পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, ২০১৫ সালের ৩ মে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বরং এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
- চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ: বক্তারা বলেন, পিন্টুকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।
- আইজিপিকে দায়ী করা: তাঁরা বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে দায়ী করে তাঁর বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলেন। তাঁদের দাবি, তৎকালীন পুলিশ তথা কারা কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারে না।
পিন্টুর পরিবার ও বিএনপি শুরু থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ‘কারা হেফাজতে হত্যা’ বলে আসছে। এই মানববন্ধন সেই বিচার দাবিতে রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টা।
নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর পরিচয় ও মামলা
নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু বিএনপি’র একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তিনি মূলত পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন।
- মৃত্যুর ঘটনা: ২০১৫ সালের ৩ মে কারা হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাঁর মৃত্যু হয়। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক বলে দাবি করলেও, তাঁর পরিবার ও দল তা মানতে রাজি হয়নি।
- মামলার পটভূমি: পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাঁর কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়।
পিন্টুর ভাই সম্প্রতি রাজশাহীর আদালতে ২৭ জনকে আসামি করে নতুন করে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন। এই মামলায় তৎকালীন কারা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যা মামলাটির রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
বিচার ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এটি শুধু পিন্টুর মৃত্যু নয়; এটি দেশের কারা ব্যবস্থার সংস্কার ও দায়বদ্ধতার পরীক্ষাও। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, একজন কারাবন্দী কীভাবে যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এবং কেন তাঁর মৃত্যু হয়।
বক্তারা বলেন, কারাগারে আটক ব্যক্তির নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। শিগগিরই নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। এই ঘটনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কারা ব্যবস্থাপনার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু এমন এক সময়ে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে এলো, যখন দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারে যারা ছিলেন, তাদের অনেককেই বর্তমানে বিভিন্ন অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পিন্টুর ভাইয়ের পক্ষ থেকে আদালতে নতুন করে মামলা দায়ের এবং মানববন্ধনে আইজিপি বাহারুল আলমের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেওয়া—এই সবই রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চলমান প্রচেষ্টার অংশ।
মানববন্ধনে বক্তারা মনে করেন, বর্তমান সময়ে ন্যায়বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে এবং পিন্টুর মৃত্যুর পেছনে থাকা সত্য এখন উদঘাটিত হতে পারে।
ন্যায়বিচার ও কারা সংস্কারের দাবি
বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কারা হেফাজতে মৃত্যুর বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধন প্রমাণ করে যে, এই ঘটনাটির রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব এখনও বিদ্যমান। ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’-এর অভিযোগ এবং বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার দাবি দেশের কারা ব্যবস্থার ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। রাজশাহী আদালতে নতুন করে দায়ের হওয়া হত্যা মামলা এবং এই মানববন্ধনের মাধ্যমে পিন্টুর সমর্থকরা ন্যায়বিচার এবং কারা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবির সত্যতা উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য।
এম আর এম – ২৫০৯, Signalbd.com



