জাতীয়

অতীতের ‘তামাশার নির্বাচন’ থেকে বেরিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান

Advertisement

বাংলাদেশে অতীতের বিতর্কিত, তামাশার মতো নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের প্রধান দাবী।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “নির্বাচন বললেই আমাদের মনে আসে অতীতের কিছু ঘটনা—প্রহসনের নির্বাচন, প্রতারণার নির্বাচন, তামাশার নির্বাচন। এগুলো আমাদের অতীত। আমাদের এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের দিকে নিয়ে যেতে হবে।”

দায়িত্বের গুরুত্ব ও পুলিশের ভূমিকা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী এই নির্বাচনে ৬৪ জেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব এড়ানো। যদি নিজস্ব ইচ্ছায় দায়িত্ব পালন করা হতো, অনেক সময় শত চেষ্টা সত্ত্বেও পক্ষপাতিত্ব ঢুকে পড়ত। দৈবচয়ন সিস্টেম নিশ্চিত করে, যে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো রকম পক্ষপাতিত্ব থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা সাধারণভাবে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু এবারের নির্বাচন একেবারে ঐতিহাসিক। এটি শুধু রুটিন নির্বাচন নয়, এটি একটি দেশের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচনের প্রতিফলন। এর মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শক্তি প্রদর্শিত হবে। বাইরে থেকে যে পর্যবেক্ষকরা আসবেন, তারা আমাদের খুঁত ধরার চেষ্টা করবে, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি নির্বাচন যেখানে কারও পক্ষপাত থাকবে না এবং যা আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।”

গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব ও ইতিহাসে স্থান

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এটি সাধারণ নির্বাচন নয়। পাঁচ বছর পর পর হয় এমন রুটিন নির্বাচন নয়। এটি গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই নির্বাচন। এটি হবে সেই নির্বাচন, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলবে, ‘বাংলাদেশে আমরা এমন একটি নির্বাচন দেখেছি যা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক।’”

তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দেন, “আপনাদের দায়িত্ব শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নয়। আপনাদের উচিত হবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে জনগণ পুরো প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখে। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন নির্বাচন, যা শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করবে।”

নির্বাচন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এদিন আরও বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মিলিয়ে পরিচালনা করা হবে। যে পর্যবেক্ষকরা বিদেশ থেকে আসবেন, তারা দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেখবে। এটি একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে, যে দেশে গণঅভ্যুত্থানের পরও শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।”

তিনি বাংলাদেশ পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের দায়িত্ব শুধু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়। আপনাদের উচিত হবে নির্বাচন পরিচালনার সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা মেনে চলা, যাতে কোনো প্রকারের অনিয়ম বা পক্ষপাত সৃষ্টি না হয়। দেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের প্রতি বলেন, “নির্বাচনের সময় যে কোনো সমস্যা, বিশৃঙ্খলা বা সংঘর্ষ হলে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের আগে এবং পরে জনগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন শুধুই কাগজে বা ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এটি দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া। এজন্য আপনাদের যথাসম্ভব সতর্ক, ন্যায়পরায়ণ এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”

ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শক্তি

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “দেশের মানুষ অতীতের তামাশার নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এবার জনগণ চাইছেন একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্য হলো ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে এমনভাবে পরিচালনা করা, যা দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ভোটাররা মনে রাখবেন, এবারের নির্বাচন শুধু ভোটের জন্য নয়। এটি গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম। যারা জনগণের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এই নির্বাচন অপরিহার্য।”

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও স্বচ্ছতা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বাইরের পর্যবেক্ষকরা আমাদের নির্বাচন দেখবে, তারা তুলনা করবে এবং শেখাবে। আমরা চাই তারা বলুক, ‘এভাবে নির্বাচন করা সম্ভব, এবং এটি সত্যিই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।’ আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি নির্বাচন, যা দেশের জন্য গর্বের এবং আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।”

তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, “নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের গাফিলতি বা পক্ষপাত হওয়া চলবে না। আমাদের উচিত জনগণকে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এটি একটি দায়িত্ব, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য স্পষ্ট, “বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। অতীতের তামাশার নির্বাচন থেকে বের হয়ে এবারের নির্বাচন হবে দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার দৃষ্টান্ত। পুলিশ বাহিনীসহ সকল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচিত সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই নির্বাচন পরিচালনা করা।”

তিনি শেষমেশ বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেখাবো, বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে কার্যকর। আমাদের দেশ, আমাদের জনগণ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে।”

MAH – 14125 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button