অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির উদ্বেগ মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইশোর বেশি খাদ্যপণ্যে আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছেন। গরুর মাংস, কফি, কলা ও কমলার রসসহ গুরুত্বপূর্ণ ভোজ্যপণ্যের ওপর এই পরিবর্তন ভোক্তা দামে প্রশমনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মূল্যস্ফীতির চাপ ও ভোক্তা অসন্তোষ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে গরুর মাংস, কফি ও অন্যান্য প্রায় ২০০টি খাদ্যপণ্যে আরোপিত আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত তার শুল্কনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে গণ্য হচ্ছে এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের ১৩ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে কার্যকর করে দেওয়া একটি নির্বাহী আদেশে দুইশোর বেশি খাদ্যপণ্যে আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এ তালিকায় রয়েছে গরুর মাংস, কফি, কলা, কমলার রস, বিভিন্ন ফল, মসলা এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য।
শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা করতে গিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক ভোগ্যপণ্যের দামে প্রভাব তৈরি করতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যস্ফীতি প্রায় নেই বললেই চলে।
মূল্যস্ফীতির প্রবণতা ও খাদ্যদ্রব্যের দামে ধারাবাহিক বৃদ্ধি ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়িয়ে তুলেছিল। বিশেষ করে কফি ও মাংসের মূল্য বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধি করেছে
ট্রাম্প প্রশাসন নতুন বাণিজ্য কাঠামোগত চুক্তি করেছে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও এল স্যালভাদরের সঙ্গে, যাতে তাদের কিছু কৃষিপণ্যে দেওয়া শুল্কছাড় নিশ্চিত করা হয়।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শুল্কপতন থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সাধারণ ভোক্তারা। আমদানিকৃত খাবারপণ্যের দামে কমবেশি নিরাপদ বাফার তৈরি হতে পারে, যা গৃহস্থালির জন্য উপকারী হবে।
খাদ্যশিল্প সমিতি যেমন Food Industry Association ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের প্রেসিডেন্ট লেসলি সারাসিন বলেন, এই শুল্কছাড় ভোক্তাদের পক্ষে একটি বড় সুবিধা এবং “কফির মূল্য আবার কিছুটা সাশ্রয়ী হতে পারে”।
একদিকে, কিছু সমালোচক মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এসেছে, এবং তিনি এখন রাজনৈতিক টানাপোড়ন সামলানোর জন্য কৌশলগত ফিরে আসছেন।
অন্যদিকে, কৃষি-রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি লাভজনক উন্নয়ন। উদাহরণস্বরূপ, আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডর এই পদক্ষেপকে তাদের কৃষি রফতানির বাজার সম্প্রসারণ হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মত
অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। দীর্ঘদিনের শুল্কনীতির বিপরীতে এটি একটি কৌশলগত উথল-পাথল নির্দেশ করে, বিশেষ করে সরকারের জন্য ভোক্তাদের জীবিকাগত চাপকে হ্রাস করার এক পথ হিসেবে।
একই সময়ে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে শুধু শুল্ক প্রত্যাহারেই দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। উৎপাদন খরচ, পরিবহন, স্থানীয় শিল্পের সক্ষমতা — এসব দিকেও নজর দিতে হবে।
এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন, এই সিদ্ধান্ত আসন্ন ভোট বা জনসংহতির ব্যাকড্রপ হিসেবে হলেও কাজ করতে পারে। ভোক্তা চাপ এবং রাজনৈতিক চাহিদার কারণে শুল্ক নীতির কয়েকটি কঠিন দৃষ্টিকোণ নরম করা হচ্ছে বলে তারা মত দিয়েছেন।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পথ
এই প্রাথমিক সিদ্ধান্তটির পরে আরও বেশ কিছু খাদ্য ও কৃষিপণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই আরও বাণিজ্যিক চুক্তি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াচ্ছে।
ভোক্তা ব্যয় কমাবার পাশাপাশি, শুল্ক রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন কৌশলও আলোচনায় আসতে পারে — যেমন শুল্ক রাজস্ব দিয়ে কিছু নগদ সহায়তা বা ফেরত পরিকল্পনা।
তবে একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, যদি মাত্র পণ্য-ভেদে শুল্ক কমানো হয় এবং সার্বিক শুল্কনীতি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ ফলাফল আসতে পারে।
গরুর মাংস, কফি, কলাসহ প্রায় ২০০ খাদ্যপণ্যে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা ও বাজার উভয়ের জন্যই একটি বড় পদক্ষেপ। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা সাধারণ মানুষের জন্য এটি সান্ত্বনার বার্তা হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি আরও গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের আগামীর নীতিমালা এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তি-পরিকল্পনা মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
এম আর এম – ২২৪১,Signalbd.com



