রাজনীতি

মুসলমানদের মৌলিক দাবি আদায় না হলে আমরা সেই সংবিধান মানি না

Advertisement

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন-এ তহরীক খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের আমির ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যদি মুসলমানদের মৌলিক দাবি সংবিধানে প্রতিফলিত না হয়, তাহলে তারা সেই সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সনদকে মানতে অস্বীকার করবে।

খতমে নবুওয়ত: মুসলিম আকীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ

খতমে নবুওয়ত বা নবুওয়াতের সমাপ্তি ইসলামের একটি মূল আকীদা। এর অর্থ হলো, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ নবী হিসেবে পাঠিত হয়েছেন। তাঁর পর আর কোনো নবী-রাসূল আসবেন না এবং কিয়ামত পর্যন্ত নতুন নবী পাঠিত হবেন না।

ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, খতমে নবুওয়ত হলো মুসলিমদের ঈমানের একটি অতি সংবেদনশীল স্তম্ভ। “এই বিশ্বাস ছাড়া কেউ মুসলিম হতে পারে না,” তিনি বলেন। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে পাঠিয়ে নবুওয়াতের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন।

ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর বক্তৃতার মূল বিষয়সমূহ

১. মৌলিক দাবি পূরণ না হলে সংবিধান মানা হবে না

ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা সেই সংবিধানও মানি না, সেই সনদও মানি না, যদি মুসলমানদের মৌলিক দাবি আদায় করা না হয়।” তাঁর মতে, মুসলমানরা দেশের প্রকৃত মালিক। তারা কর ও ভ্যাট দিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের গাড়ি, সরকারি ব্যয় এবং অন্যান্য কর্মসূচি পরিচালনায় অবদান রাখে। তাই মৌলিক দাবি পূরণ না হলে তারা রাষ্ট্রীয় সনদকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নন।

২. খতমে নবুওয়ত আকীদার অপরিহার্যতা

ড. আব্বাসী বলেন, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পর আর কোনো নবী-রাসূল আসবেন না। এটি ইসলামের মৌলিক আকীদা। খতমে নবুওয়তকে অস্বীকার করলে কেউ মুসলিম হিসেবে স্বীকৃত হতে পারবে না। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং মুসলিম পরিচয়ের মূল ভিত্তি।

৩. রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন

তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক নেতারা সেক্যুলার রাজনীতির আড়ালে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের কাছে সেক্যুলার বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাজ কি শুধু অমুসলিমদের স্বার্থ দেখানো?” তার মতে, সাধারণ রাজনীতি সেক্যুলার ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও মুসলমানদের মৌলিক দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।

৪. অর্থনৈতিক অবদানের দাবি

ড. আব্বাসী বলেন, মুসলমানরা কর ও ভ্যাট দিয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত কার্যক্রমে অবদান রাখছেন। কিন্তু তাদের মৌলিক দাবি পূরণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “যদি মুসলমানদের মৌলিক দাবি সংবিধানে প্রতিফলিত না হয়, তাহলে আমরা সেই সংবিধানও মানি না।”

৫. খতমে নবুওয়তের জিহাদ ও আন্দোলন

তিনি তার বক্তৃতায় খতমে নবুওয়তের আন্দোলনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “খতমে নবুওয়তের জিহাদ সবচেয়ে বড় জিহাদ এবং খতমে নবুওয়তের আন্দোলন সবচেয়ে বড় আন্দোলন।” এটি শুধু রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক দাবি নয়, বরং মুসলিমদের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় লড়াই।

কাদিয়ানী সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিজেদের ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বাস করেন যে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন, যা ইসলামের খতমে নবুওয়ত আকীদার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা দাবি করেছেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা উচিত।

তাদের যুক্তি অনুযায়ী, এটি কেবল বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক মুসলিম ঐক্য ও বিশ্বাসের প্রশ্ন। সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা আশা প্রকাশ করেন যে, মুসলমানদের মৌলিক দাবি আদায়ের জন্য রাষ্ট্রীয় ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

ড. আব্বাসীর বক্তব্য স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে খতমে নবুওয়ত কেবল একটি ধর্মীয় আকীদা নয়। এটি রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও সামাজিক দাবিরও প্রতিফলন

  • সংবিধানে মুসলমানদের মৌলিক দাবির অন্তর্ভুক্তি না হলে এটি সংবিধান সংশোধন ও নতুন আইন প্রণয়নের আলোচনার সূচনা করতে পারে।
  • কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণ হতে পারে। একই সঙ্গে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে।
  • সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি ধর্মীয় স্বচ্ছতা ও নাগরিক স্বীকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

অন্যান্য মুসলিম দেশে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার ইতিহাস বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানে ১৯৭৪ সালে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছিল। ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশের খতমে নবুওয়ত আন্দোলন আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সংহতির অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

সমালোচনা ও নাগরিক দৃষ্টিকোণ

যদিও ধর্মীয় নেতারা খতমে নবুওয়তের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, কিছু নাগরিক ও বিশ্লেষক এটিকে নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক পরিচয় থাকা উচিত।

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, সেক্যুলার রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধারণা মুসলমানদের ধর্মীয় আকীদার দাবিকে পুরোপুরি সমর্থন করতে পারে না। ড. আব্বাসীর বক্তৃতা এই তর্ককে আরও তীক্ষ্ণ করেছে।

ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর বক্তৃতা এবং আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, খতমে নবুওয়ত শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক মর্যাদার দাবি

মৌলিক দাবি পূরণ না হলে মুসলিম জনগণ সংবিধান ও সনদকে মানতে অস্বীকার করবে। এটি ভবিষ্যতে সরকারের, আইনপ্রণেতার এবং সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম, রাজনীতি ও সামাজিক ন্যায়ের আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

Singnalbd.com-এর পাঠকদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, যা কেবল ধর্মীয় আন্দোলন নয়, বরং নাগরিক অধিকার, সামাজিক ন্যায় এবং সংবিধানগত পণপ্রশ্নকেও স্পর্শ করছে।

MAH – 13806 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button