প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ফের স্পষ্ট করেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং এতে বৃহৎ ভোটার উপস্থিতি থাকবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে আলোচনা: গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমন্বয়
উভয় নেতার বৈঠকে বহুমুখী আলোচনা হয়। বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয়গুলো ছিল:
- ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন
- অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ
- বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
- রোহিঙ্গা সংকট
- বিমান ও সামুদ্রিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায়
ড. ইউনুস বৈঠকে জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সকল নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত।
তরুণদের ভোটাধিকার: বিশাল অংশগ্রহণ প্রত্যাশা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এবার লাখো তরুণ প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের সময় তিনটি সাজানো নির্বাচনে এই তরুণরা তাদের ভোটদানের সুযোগ পাননি।
ড. ইউনুস বলেন, “আমরা চাই তরুণরা নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিক। তাদের অংশগ্রহণ আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক হবে।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অযোগ্যতা
প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কারণ, দলটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছে। এছাড়াও, নির্বাচন কমিশন দলটিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা থেকেও বাদ দিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। তবে আইন এবং নিয়মকানুন অনুযায়ী যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য নয়, তাদের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি
ড. ইউনুস ও ব্রিটিশ মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যানের বৈঠক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, অবৈধ অভিবাসন, এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে রয়েছেন। ড. ইউনুস এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন আশা করছেন।
অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ
অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈঠকে উভয় পক্ষ এ বিষয়ে সমন্বয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগগুলো খুঁজে দেখেছেন।
বাণিজ্য সম্প্রসারণ
বৈঠকে ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার খোলার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে বিমান ও সামুদ্রিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচনের গুরুত্ব: স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি
ড. ইউনুস মনে করেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পুনরায় সুসংহত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তিনি বলেন, “নির্বাচন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় যে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ আইন এবং নিয়ম অনুযায়ী নিশ্চিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি
ড. ইউনুসের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে তার মূল লক্ষ্য হলো:
- নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করা।
- নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সর্বাধিক ভোটার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
- তরুণ ভোটারদের প্রথমবারের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া।
- আইন এবং নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
তিনি এ বিষয়েও জোর দিয়ে বলেন, “এবারের নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সবাই আইন অনুযায়ী অংশ নেবে, এবং যে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোটারদের প্রস্তুতি
জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি, এবং সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
তরুণ ভোটাররা আগ্রহী
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ অতীতের তুলনায় অনেক বেশি হবে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভোটাধিকার সীমিত ছিল, এবং এবার প্রথমবার তারা সক্রিয়ভাবে ভোট দিতে পারবেন।
নিরাপদ ও নিরপেক্ষ ভোটের নিশ্চয়তা
নির্বাচন কমিশন ভোটের সময় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোট দিতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণও আশা করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করবে।
সংক্ষিপ্তসার
- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
- নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক।
- লাখো তরুণ ভোটার প্রথমবার ভোট দেবে।
- বৈঠকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট, অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
- নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা, ভোটার তালিকা ও পর্যবেক্ষণ প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে।
এবারের নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
MAH – 13801 I Signalbd.com



