বিশ্ব

অধিকৃত পশ্চিম তীরে মসজিদে আগুন দিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা

Advertisement

অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর সালফিত এবং দেইর ইস্তিয়া গ্রামে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা দুটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে। হামলার সময় মসজিদের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কুরআনের কপি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মসজিদের বিভিন্ন সামগ্রী ভেঙেচুরে ফেলে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

হামলার সময় বসতি স্থাপনকারীরা মসজিদের দেয়ালে ‘আমরা ভয় পাই না’, ‘আমরা আবার প্রতিশোধ নেব’ এবং ‘নিন্দা চালিয়ে যাও’ ধরনের গ্রাফিতি লিখে যায়। মসজিদের ভিতরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জানালার কাচ ভেঙে গেছে।

সালফিত শহরের উত্তর-পশ্চিমে হাজ্জা হামিদা মসজিদে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী মধ্যে কার্পেট, কুরআনের কপি এবং ধর্মীয় অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।

একই সময়ে, বেথলেহেমের পূর্বে কিসান গ্রামে বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ২৫ বছর বয়সী একজন যুবককে গুলি করে আহত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘কলনাইজেশন ও ওয়াল রেজিস্টান্স কমিশনের’ (সিআরআরসি) প্রধান মুয়াইয়াদ শাবান জানান, ইসরাইলি শাসক বাহিনী গত মাসে পশ্চিম তীর জুড়ে ১,৫৮৪টি আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংস হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং ফিলিস্তিনি জলপাই বাগান ধ্বংস।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দিয়েছে যে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি দখলদারিত্ব অবৈধ। আদালত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব আল-কুদসে বসতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিল।

দুই বছর আগে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি তরুণদের ওপর হামলা, কৃষিজমি ও জলপাই বাগান ভাঙচুর এবং মসজিদের ওপর আগুনের ঘটনা নতুন নয়, বরং ধারাবাহিকভাবে ঘটছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরের এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়া এবং গাজায় পরিস্থিতি আরও জটিল করার আশঙ্কা রয়েছে।

তাছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ও এই হামলাকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে। আওকাফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটিকে ‘মুসলমানদের অনুভূতির ওপর স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে ঘোষণা করেছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই সহিংসতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

ফিলিস্তিনি সমাজে ধর্মীয় স্থানের ওপর হামলা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় মুসলমানরা ধর্মীয় স্থান রক্ষায় আরও সতর্ক হচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই হামলা ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বকে নতুন করে তেজি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপের দাবি বাড়াচ্ছে।

বিশ্লেষণ

অভিজ্ঞ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এই ধরনের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলা ইসরাইলি নীতি এবং সরকারের নীরবতার ফল। আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে এসব হামলা অবৈধ এবং তা শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।

একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “মসজিদে আগুন দেওয়া একটি ধর্মীয় স্থানের ওপর আক্রমণ এবং এটি ফিলিস্তিনি জনগণের মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নষ্ট করছে। দ্রুত আন্তর্জাতিক নজরদারি প্রয়োজন।”

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি মসজিদে অগ্নিসংযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় মুসলিম সমাজ ক্ষুব্ধ, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের সহিংসতা আরও বাড়তে পারে যদি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ ও আইনি পদক্ষেপ কার্যকর না হয়।

এম আর এম – ২২৩১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button