রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন (১৫) তার নিজ বাসায় খুন হয়েছেন। ঘটনার সময় তার মা তাসমিন নাহার লুসী গুরুতর আহত হয়েছেন। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকারী লিমন মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। হত্যার আগে লিমন ফোনে নিয়মিত হুমকি দিতো, এবং ঘটনার মাত্র সাত দিন আগে জিডি করা হয়েছিল।
ঘটনার বিস্তারিত
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহীর ডাবতলা এলাকায় বিচারকের নিজ বাসায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। হামলাকারী লিমন মিয়া দারোয়ানকে “বিচারকের ভাই” পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। এরপর তাওসিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তাসমিন নাহারকে গুরুতর আহত করা হয়।
পরে গৃহকর্মী ও অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে নেন। তাওসিফকে মৃত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুরুতর আহত তাসমিন নাহারের চিকিৎসা বর্তমানে হাসপাতালেই চলছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, লিমনের পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে।
পূর্বঘটনা ও জিডি
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যার মাত্র ১০ দিন আগে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিমনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। জিডিতে উল্লেখ ছিল, লিমন তার পরিবারকে হুমকি দিতো এবং তাওসিফসহ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করতে পারে।
জিডিতে বলা হয়েছিল, লিমন তাদের সঙ্গে পরিচয়ের পর মোবাইল নম্বর নিয়েছিলেন এবং পরিবারের আর্থিক দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে নিয়মিত সহযোগিতা চাইতেন। সহযোগিতা না দিলে হুমকি দিতেন। ৩ নভেম্বর তার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে পরিবারকে হত্যা করার হুমকি দেয়। এই নিরাপত্তাহীনতার কারণে জিডি করা হয়েছিল।
হামলার প্রভাব
ঘটনাটি রাজশাহী ও দেশের বিচার বিভাগে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিচারক পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে সতর্কতা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও স্থানীয় প্রশাসন এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
স্থানীয়রা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছেন এবং প্রশাসনের প্রতি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীরা পরিবার ও বিচারক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন।
পুলিশ ও তদন্তের পরিস্থিতি
লিমন মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে এবং বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভবন প্রবেশের সময় লিমন দারোয়ানের কাছে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছিল।
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তির সন্ধান করছে। এ ছাড়া, হত্যার পেছনের প্রকৃত কারণ ও পূর্বঘটনার সঙ্গে জিডির যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিচারক ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিচারকদের পরিবার নিরাপদ থাকলে তারা সুষ্ঠু বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, “বিচারকের পরিবারের ওপর এমন হামলা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ। এটি প্রতিহত করতে সরকারী পদক্ষেপ এবং স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা অপরিহার্য।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল দ্রুত তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং আহত তাসমিন নাহারের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করছে।
রাজশাহীতে বিচারকের পরিবারের ওপর নৃশংস হামলায় তাওসিফ রহমান নিহত হওয়া ও তাসমিন নাহার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় পুরো দেশ স্তব্ধ। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও পুলিশ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে বিচারক ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এম আর এম – ২২৩০,Signalbd.com



