ঢাকার দোলাইরপাড়ে বাসা থেকে ধরে নিয়ে মো. বাপ্পী (১৫) নামের এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে শেখপাড়া এলাকায়। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফৌজিয়া রওশন আক্তার ওরফে প্রীতি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত কিশোর বাপ্পী সপরিবার পশ্চিম দোলাইরপাড়ে বসবাস করত এবং যাত্রাবাড়ীতে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরকে ধরে নিয়ে মারধরের পর সকালে মরদেহ শেখপাড়ার বায়তুল রহমত নুরানী মাদ্রাসার সামনে ফেলে দেওয়া হয়।
ঘটনার বিস্তারিত
বাপ্পীর বড় ভাই মো. পারভেজ জানিয়েছেন, বাপ্পী চুরি করেছে এমন অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে ফৌজিয়ার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে দিনের পর দিন আটকে রেখে মারধর করা হয়।
পরবর্তীতে, বাপ্পীর পরিবারের বাসায় তল্লাশির নামে কাপড়চোপড় ও মালামাল লণ্ডভণ্ড করা হয়। পুলিশ এসআই মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাপ্পীর শরীরে মারধরের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
ফৌজিয়া রওশন আক্তারকে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পূর্ববর্তী সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর ও শিশুদের ওপর সহিংসতা, লুটপাট ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের কিশোররা শ্রমিক বা স্কুলের পাশাপাশি স্থানীয় অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বাপ্পীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করলে জানা যায়, তার বাবা মো. শাহজাহান পেশায় রিকশাচালক। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই বাপ্পী শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকায় শোক ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি লিডাররা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দারা আশ্বাস চেয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে শিশুদের ওপর এই ধরনের সহিংসতা না ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকায় তৎপর রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ও ঘটনার তদন্ত
ফৌজিয়া রওশন আক্তারের গ্রেফতারের পর পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত থাকতে পারে, তা তদন্ত চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এই ঘটনার সঙ্গে কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীও জড়িত থাকতে পারে। এর জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত আরও জোরদার করেছে।
শিশু নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রভাব
শিশুদের ওপর সহিংসতা সমাজে ন্যায়বিচারের অভাব ও দায়িত্বহীনতার প্রমাণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দরিদ্র পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ের নজরদারির অভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
একজন সমাজকর্মী বলেন, “শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও কমিউনিটি লিডারদের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।”
নাগরিকদের নিরাপত্তা, শিশু অধিকার ও সামাজিক শান্তি ফেরানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।
ঢাকার দোলাইরপাড়ে কিশোর বাপ্পীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করার ঘটনা পুরো এলাকায় শোক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। গ্রেফতারকৃত নারী ফৌজিয়া রওশন আক্তারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শিশুদের নিরাপত্তা, দায়িত্বশীলতা ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
এম আর এম – ২২২৮,Signalbd.com



