রাজনীতি

অস্ত্র, বিত্ত ও পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়েই বাংলাদেশে রাজনীতি করা হচ্ছে: সামান্তা

Advertisement

রাজনীতিতে জনগণের প্রত্যাশা ও আদর্শিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো— এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশে অর্থ, অস্ত্র, বিত্ত ও পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়েই রাজনীতি করা হচ্ছে; যেখানে নীতি, আদর্শ ও জনগণের অংশগ্রহণ ক্রমেই অবমূল্যায়িত।”

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সামান্তা শারমিন এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতারা, তরুণ কর্মীরা এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক দলগুলো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে

সভায় সামান্তা বলেন, “আমরা এখনো নতুন ধরনের রাজনীতি গড়ে তুলতে পারিনি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কোনো দলই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বরং অর্থ ও শক্তির রাজনীতি দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে কে কতটা অর্থ ও পেশিশক্তি ব্যবহার করতে পারে, সেটাই প্রভাব ফেলে। জনগণের অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।

ভারত-পাকিস্তান ঘেঁষা রাজনীতির ধারা থেকে বের হতে না পারার আক্ষেপ

বক্তৃতায় সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরে এসে বাংলাদেশকে নিজস্ব রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দাঁড় করাতে। কিন্তু আজও আমরা সেই প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারিনি।”

তার মতে, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ ছিল, কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় সংকীর্ণতা দেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। “আমরা একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলি, আবার অন্যদিকে দলীয় স্বার্থে জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দেই— এভাবে চললে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়,” যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও এনসিপির প্রতিক্রিয়া

সভায় সামান্তা উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় মিছিল-মিটিং করছে বা করার চেষ্টা করছে। এনসিপি সেই কর্মসূচিগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।

তার ভাষায়, “আমরা মিছিলে ময়দানে প্রতিহত করছি, কিন্তু একই সময়ে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে বিরোধিতা দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে আবার সহযোগিতা করা হচ্ছে— যা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক প্রতারণা।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ধরনের দ্বৈত অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।”

জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর

সামান্তা শারমিন সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “জাতীয় ঐক্য শুধু দলের বা ব্যক্তির স্বার্থে নয়— এটি জনগণের স্বার্থে জরুরি। যদি সত্যিই আমরা বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে চাই, তাহলে দলীয় স্বার্থকে একপাশে সরিয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।”

তিনি মনে করেন, দলীয় প্রতিযোগিতা ও স্বার্থের রাজনীতিতে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। “এনসিপি হোক, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ— কারওই দলীয় স্বার্থকে জনগণের স্বার্থের ওপরে রাখা উচিত নয়,” বলেন তিনি।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বক্তব্যের তাৎপর্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামান্তা শারমিনের বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক ধরনের সতর্কবার্তা। দীর্ঘদিন ধরে অর্থ ও ক্ষমতানির্ভর রাজনীতি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে তুলেছে বলে তারা মনে করেন।

একজন রাজনৈতিক গবেষক বলেন, “যখন রাজনীতি জনগণনির্ভর না হয়ে অর্থ ও পেশিশক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে, তখন গণতন্ত্রের ভিত্তিই নড়ে যায়। সামান্তার বক্তব্য সেই বাস্তবতাকেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।”

রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াই, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক জটিল মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামান্তা শারমিনের বক্তব্য সেই চ্যালেঞ্জের দিকেই ইঙ্গিত দেয়— যেখানে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন রাজনীতির সবচেয়ে বড় কাজ।

বিশ্লেষকদের মতে, দলগুলো যদি নিজেদের স্বার্থ ছাড়িয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এক হতে পারে, তবেই বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন দিক পেতে পারে।

এম আর এম – ২২২৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button