ঢাকার প্রখ্যাত খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও তার সহযোগী মো. ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ পেয়েছে।
মামলা দায়েরের পেছনের ঘটনা
মামলাটি দায়ের করেছেন ডিপজলের ভক্ত রাশিদা আক্তারের স্বামী আব্দুল মজিদ। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমানের আদালতে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ডিপজল এবং তার সহযোগী ফয়সালের বিরুদ্ধে মারধর ও এসিড নিক্ষেপের অভিযোগে রাশিদা আক্তার ৮ জুলাই মামলা করেছিলেন। তখন পুলিশ এর তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-কে নির্দেশ দেয়।
হুমকি ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা
মামলার পর ডিপজল ও তার সহযোগীরা মামলাটি তুলে নিতে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেয়। ভয় দেখিয়ে রাশিদা আক্তার দারুস সালাম থানার এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ীতে চলে আসেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর, রাশিদা ও আব্দুল মজিদের বাসায় তারা কাজে গেলে, তাদের মেয়ে একা বাসায় ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, ডিপজলের সন্ত্রাসী বাহিনী বাসায় ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এছাড়া, তাদের মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়।
হত্যাচেষ্টার দিন
১ নভেম্বর, আব্দুল মজিদ যাত্রাবাড়ী থানার পেছনের একটি হোটেলে খাবার খাচ্ছিলেন। তখন দুইজন তাকে কথাবার্তা বলে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে সিএনজি নিয়ে শনিরআখড়ার একটি বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ও প্রলোভন দেওয়া হয়।
ডিপজলের প্রস্তাবে রাজি না হলে, ফয়সাল তাঁকে রড দিয়ে মারধর করেন এবং অন্যান্যরাও হামলা চালান। এ সময় আব্দুল মজিদ মারাত্মক আহত হন। অভিযোগ রয়েছে, ডিপজল তাঁর কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। আহত অবস্থায় তিনি পা ধরে জীবন ভিক্ষা চেয়ে মামলা তুলে নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বিকাশে থাকা সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। দুই দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে তাঁকে আহত অবস্থায় ফেলে চলে যায়।
উদ্ধার ও হাসপাতাল ভর্তির ঘটনা
আঘাতপ্রাপ্ত আব্দুল মজিদকে রাশিদা আক্তার উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ৩ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলে, পুলিশ তখন মামলা নেননি।
পিবিআই’র তদন্ত নির্দেশ
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ডিপজল ও তার সহযোগীরা গত কয়েক মাস ধরে ধমক-ধামকি, অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
পর্যালোচনা: সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। বিশেষ করে বিনোদন জগতে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সমাজে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে পারে যে, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যে কোনো হত্যাচেষ্টার ঘটনা বা হুমকিসম্পন্ন আচরণ দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ডিপজল: একজন খল অভিনেতার কেরিয়ার
ডিপজল বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে পরিচিত। দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমা জগতে কাজ করলেও বিভিন্ন বিতর্ক ও মামলা তার কেরিয়ারকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে, ভক্তদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে তার নাম বিভিন্ন সময় সংবাদ শিরোনামে এসেছে।
এই ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব
যদি মামলাটি তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, তাহলে এর প্রভাব চলচ্চিত্র জগতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর হতে পারে। এর মাধ্যমে অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের জন্যও সতর্কবার্তা পৌঁছাবে।
পিবিআই’র তদন্তের পরে আদালত যে কোনো সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে পারে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
ডিপজল ও তার সহযোগী মো. ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই’র হাতে। ঘটনার বিবরণ, হুমকি, হামলা, অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া এবং ভুক্তভোগীর হাসপাতালে ভর্তি—সবই মামলায় উল্লেখ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালত এই মামলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
MAH – 13793 I Signalbd.com



