ক্রিকেট

ইনিংস জয়ের পথে বাংলাদেশ, চাপে আয়ারল্যান্ড

Advertisement

সিলেটের জিম্বাবুয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিং দুইটাই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। টেস্টে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই স্কোরের পর আয়ারল্যান্ডের জন্য ইনিংস জয়ের আশা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

প্রথম দিনের ত্রুটিপূর্ণ ফিল্ডিং, পরের দুই দিনের শক্তিশালী পারফরম্যান্স

পরশু শুরু হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশ কিছুটা দিশাহীন মনে হয়েছিল। ফিল্ডিংয়ে ছোটখাটো ভুল এবং কিছু গুবলেট দৃশ্য ফুটে উঠেছিল মাঠে। তবে পরের দুই দিন অধিনায়ক শান্তের নেতৃত্বে দল চমক দেখিয়েছে। ব্যাটিং ও বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নিজেদের দাপট দেখিয়েছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড ৫ উইকেটে ৮৬ রানে থেমে গেছে। ইনিংস পরাজয় এড়াতে তাদের এখনও ২১৫ রান করতে হবে। ফলে বাংলাদেশ শিবিরে ইনিংস জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

নাহিদ রানার উইকেট উদযাপন

বাংলাদেশের তরুণ পেসার নাহিদ রানা ফিল্ডে প্রতিটি উইকেটকে উৎসবের মতো উদযাপন করেছেন। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের প্রথম উইকেট নেওয়ার পর তার উদযাপন দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ক্যাড কারমাইকেলকে (৫) বোল্ড করেন নাহিদ। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়েন পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর।

স্টার্লিং ৪৩ রানে আউট হওয়া পর্যন্ত এই জুটি আয়ারল্যান্ডকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দিচ্ছিল। তবে যেভাবে স্টার্লিং আউট হয়েছেন তা ছিল চমকপ্রদ। তাইজুল ইসলামের বলে প্রথমে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। পরে সরাসরি থ্রোতে স্ট্রাইকপ্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন অধিনায়ক শান্ত।

প্রথম ইনিংসে রেকর্ড গড়া স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৪১ ওভারে ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস স্কোর ছিল ২০১৩ সালে গড়ে ৬৩৮ রান। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি (২০০) ও মোহাম্মদ আশরাফুল (১৯০) এবং নাসির হোসেনের (১০০) সেঞ্চুরি ছিল।

এই টেস্টে মাহমুদুল হাসান, মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম ও লিটন দাসের ব্যাটিং সাফল্য দলের স্কোরকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মাহমুদুল জয়ের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন। মুমিনুল হকও সেঞ্চুরির ঘরে পৌঁছানোর কাছাকাছি ছিলেন। তবে লাঞ্চের আগে জয় (১৭১) ও মুমিনুল (৮২) আউট হন। মুশফিকুর রহিমও ২৩ রানে লাঞ্চের আগে বিদায় নেন।

লাঞ্চের পর অধিনায়ক শান্ত নতুন রেকর্ড গড়েন। ১১২ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন। এটি তার অধিনায়কত্বের চারটি সেঞ্চুরির মধ্যে একটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুশফিক ও শান্তের এই রেকর্ড যৌথভাবে সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরি হিসেবে স্বীকৃত। তবে দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পারেননি শান্ত। ১১৪ বলে ১৪ চারে ১০০ রান করার পর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ধরা পড়েন।

আয়ারল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ

দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড শুরুতেই ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারায়। তারপর নাহিদ রানা প্রথম উইকেট তুলে দেন। স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টরের দ্বিতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়লেও স্টার্লিং আউট হয়ে যাওয়ায় আয়ারল্যান্ডকে বড় ধাক্কা লাগে। ম্যাথু হামফ্রিসের ৫ উইকেট আয়ারল্যান্ডের ইনিংসকে যথেষ্ট চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

লিটন দাসের ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিং

লিটন দাসও ওয়ানডের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখিয়েছেন। ৬৬ বলে ৬০ রান করে তিনি আউট হন। বাংলাদেশ এই ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরির সুযোগ পেয়েছিল। তবে সাদমান ইসলাম (৮০) ও মুমিনুল হক (৮২) ৮০-এর ঘরে আউট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

সমালোচনা এবং মানসিক প্রস্তুতি

অধিনায়ক শান্ত সমালোচনা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না। তিনি বলেন, “এসব কথা আমার কানেও আসে। আমি বুঝতে পারি, তারা (সমর্থকরা) আমার সমালোচনা করছে। তবে আমি ম্যাচের দিকে মনোযোগ রাখছি।” এই মানসিক দৃঢ়তা দলের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

দলীয় প্রস্তুতি এবং সামনের চ্যালেঞ্জ

লম্বা ভ্রমণ শেষে কানাডা থেকে শমিত সোম ঢাকায় এসেছেন। তাঁর একাদশে খেলার সম্ভাবনা আছে। শেখ মোরছালিন চোটের কারণে অনুশীলন শুরু করতে পারেননি। তবে ম্যাচের আগপর্যন্ত তাঁকে দেখা যাবে।

অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচকে সামনে রেখে কোচ পুরো মনোযোগ রেখেছেন। তিনি বলেছেন, “ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নেপালের সঙ্গে নিজেদের যাচাই করার ম্যাচ। এশিয়ান কাপে আমাদের আর সুযোগ নেই। তারপরও ভারত ম্যাচ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।”

আজ রাতে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও জয়ের দিকে নজর রাখছেন। মূল লক্ষ্য ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো প্রস্তুতি। জামাল বলেন, “নেপালের সঙ্গে জিততে হবে। গত দুটি ম্যাচে আমরা কাছাকাছি গিয়েছিলাম। এই ম্যাচ অবশ্যই আমরা জিততে চাই।”

সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিংই সমান শক্তিশালী। ইনিংস জয়ের দিকেই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে তারা। নাজমুল হোসেন শান্তের নেতৃত্ব, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলামের বোলিং এবং লিটন দাস, মুমিনুল হক, সাদমান ইসলামদের ব্যাটিংয়ে ভর করে বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা এখন উজ্জ্বল। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস পরাজয় এড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি নতুন আশার আলোর দ্যুতি, যা সমর্থকরা আশা করছিলেন। আগামী ম্যাচগুলোতে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেই ইতিহাস গড়ার পথ হবে সুপ্রসারিত।

MAH – 13792 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button