আঞ্চলিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গভীর রাতে রেললাইনে আগুন, ট্রেন চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর উপজেলার দুবলা এলাকায় বুধবার গভীর রাতে রহস্যজনকভাবে রেললাইনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় রাত পৌনে দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আগুনের কারণে কিছু সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এসময় চট্টগ্রামগামী তূর্ণানিশিথা পাঘাচং এবং বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়ে। তবে আধঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়।

আখাউড়া রেলওয়ে থানার পুলিশি তৎপরতা

ঘটনার বিষয়ে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খবর পেয়ে রাত সোয়া তিনটার দিকে তিনি ও তাঁর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা রেললাইনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করে আগুন লাগিয়েছিল। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই দুষ্কৃতকারীরা স্থান ত্যাগ করে।

ওসি আরও জানান, ট্রেন চলাচল তৎক্ষণাৎ ব্যাহত হলেও পরে স্বাভাবিক হয়েছিল। তিনি স্থানীয়দের সতর্ক থাকার জন্য এবং কোনো সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখতে পেলে পুলিশকে অবহিত করার আহ্বান জানান।

ট্রেন যাত্রীর অভিজ্ঞতা

স্থানীয় যাত্রীরা জানান, রাতের অন্ধকারে হঠাৎ ট্রেন থেমে গেলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। চট্টগ্রামগামী তূর্ণানিশিথা পাঘাচং ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। তবে আধঘণ্টার মধ্যেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়, তাই ভয়ও কমে গেছে।”

রেলওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এ ঘটনার পর আবারও রেললাইনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে রাতে দূরবর্তী এলাকাগুলোতে রেললাইন রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত তৎপরতা রয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “রেললাইনের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে দূরবর্তী এলাকাগুলোতে তৎপরতা সীমিত হওয়ায় মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও সতর্ক থাকব।”

স্থানীয়দের উদ্বেগ

দুবলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় রাতের অন্ধকারে রেললাইনের নিরাপত্তা খুবই শিথিল। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এলাকায় নিয়মিত পেট্রোলিং বাড়াক, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।”

বাংলাদেশে রেললাইন আগুনের পূর্ব ইতিহাস

বাংলাদেশে রেললাইনে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দূরবর্তী এলাকায় ট্রেন চলাচলের পথে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারীরা সামাজিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। তবে কখনো কখনো দুর্ঘটনা ও অজ্ঞতা থেকেও এমন ঘটনা ঘটে।

নিষ্কাশন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনা রোধ করতে আধুনিক মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করছে। CCTV ক্যামেরা, নকশা চিহ্নিতকরণ ও রাতের পেট্রোলিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় মানুষদেরও সচেতন করা হচ্ছে যে তারা যদি সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখে, তা অবিলম্বে পুলিশের কাছে জানাবে।

ট্রেন চলাচলে সাময়িক প্রভাব

অগ্নিকাণ্ডের ফলে চট্টগ্রামগামী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো কিছু সময়ের জন্য আটকা পড়লেও পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ট্রেন চলাচলে সাময়িক প্রভাব পড়লেও কোনো যাত্রী আহত হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেন পরিচালনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গভীর রাতে রেললাইনে আগুনের ঘটনা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। এটি রেলওয়ের নিরাপত্তা ও দূরবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসন পর্যন্ত সবাইকে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সহযোগিতা করতে হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

MAH – 13780 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button