বাংলাদেশ

নাশকতার আশঙ্কায় দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি

Advertisement

বর্তমান সহিংসতা ও নাশকতার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের সব আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা হুঁশিয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্দেশনার ধরণ ও প্রয়োগক্ষেত্র

বেবিচকের সদর দপ্তর মঙ্গলবার দেশের সকল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এক নির্দেশনা প্রেরণ করেছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতা, গ্রুপবদ্ধ নাশকতার সম্ভাবনা ও আগুনসহ নিরাপত্তা ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে বিমানে যাত্রী ও কার্যক্রমের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনায় সিসিটিভি মনিটরিং, টহল সংখ্যা বাড়ানো, ফায়ার সার্ভেইলেন্স শক্তিশালী করার পাশাপাশি জরুরি সময় সাড়া দিতে সক্ষম প্রতিক্রিয়া দল মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ রয়েছে—“বিমানবন্দর এলাকায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।”

পূর্ববর্তী নিরাপত্তা প্রেক্ষাপট

বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনাবলী বাড়ছে। যেমন, কোনো বিমানবন্দর কার্গো হাউসে আগুন লাগার একটি ঘটনার পর বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে জোরদার করা হয়েছিল। এই ঘটনার পরে বেবিচক নিরাপত্তা ও মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল, যা এবার একটি সার্বভৌম সতর্কতা নির্দেশনায় রূপ নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাইবেটাকসহ বিমান নিরাপত্তায় হুমকির নজির রয়েছে—যেমন ইউরোপের কিছু বিমানবন্দরে সাইবার হামলার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য নির্দেশনা জারি করা হলো। 

নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন

বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে—প্রত্যেক বিমানবন্দরে সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে হবে। এছাড়া, ফায়ার সার্ভেইল্যান্স ও নিরাপত্তাজনিত টহল কার্যক্রমকে তৎপর করতে হবে। যেমন—বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা, পার্কিং জোন, যাত্রী ওঠানামার প্রান্তিক স্থানগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বিমানে বা বিমানবন্দর প্রবেশপথে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তুর উপস্থিতি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দলকে অবহিত করা হবে। এমনকি যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাহ্যিক নিরাপত্তা অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নির্দেশনাটি কার্যকর করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, শুধু নির্দেশনায় লেখা যথেষ্ট নয়—মানব সম্পদ, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণও সমান গুরুত্ব বহন করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, “বিমানবন্দর নিরাপত্তা কঠোর করতে হলে শুধু সিসিটিভি আর টহল বাড়ানো যথেষ্ট নয়; সন্দেহভাজন তথ্য বিশ্লেষণ, যোগাযোগ চ্যানেল মনিটরিং এবং উন্মুক্ত করা তথ্যস্রোত নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।”

সাধারণ যাত্রী ও বিমানবন্দর ব্যবহারকারীরা আশা প্রকাশ করছেন, এই ধরনের নির্দেশনার ফলে নিরাপত্তা বোধ বেড়ে যাবে এবং যাত্রী পরিষেবার মান উন্নত হবে।

সম্ভাব্য প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

এই সতর্কতা নির্দেশনায় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছে। তবে একাধিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে—যেমন পর্যাপ্ত পেশাদার নিরাপত্তাকর্মীর অভাব, প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর ঘাটতি ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরগুলোর কর্মক্ষমতা ও নিরাপত্তা মান ভালো হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বিমানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও তথ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন অপরিহার্য।

নাশকতার আশঙ্কায় দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে—এটি সময়োপযোগী এবং জরুরি পদক্ষেপ। তবে এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর করার পরই তা ফলপ্রসূ হবে। যাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব কেবল সূচনা নয়, ধারাবাহিক মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সমর্থনের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হয়। আগামী দিনে দেখা যাবে, এই নির্দেশনা বাস্তবে কতটা নমনীয় ও কার্যকর হয়।

এম আর এম – ২২০০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button