বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার কোনো বক্তব্য দেননি। মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মতবিনিময় সভায় তাঁর বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পরে রাতে এক বিবৃতিতে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন ফখরুল।
বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচারের অভিযোগ
বিএনপি মহাসচিবের দাবি, তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন,
“আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চাই না। আওয়ামী লীগের মতো হয়রানিমূলক মামলা করতে চাই না। আমি সভায় বলেছি, যদি স্থানীয়ভাবে কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে, সেটি আমরা প্রত্যাহার করব। কিন্তু কোথাও আমি দেশব্যাপী মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলিনি।”
ফখরুল বলেন, তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ কাটছাঁট করে প্রচার করা হয়েছে, যার ফলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তিনি জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন।
মতবিনিময় সভায় কী বলেছিলেন ফখরুল
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব। মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের এক মতবিনিময় সভায় তিনি বক্তব্য দেন। সেই সভায় উপস্থিত কয়েকজন জানান, ফখরুল বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের মতো প্রতিশোধমূলক মামলা করব না। যদি কোথাও হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে, আমরা সেগুলো প্রত্যাহার করব।”
এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের দায়ের করা সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
দলীয় বিবৃতি ও ব্যাখ্যা
বিকেলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর রাতে বিএনপির দফতর থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়,
“মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি কেবল ওই ইউনিয়নের প্রসঙ্গ এনেছেন। দেশব্যাপী মামলা প্রত্যাহারের কোনো বিষয় তিনি বলেননি।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করা এবং হয়রানিমূলক মামলার সংস্কৃতি বন্ধ করা। মিডিয়া সেল থেকেও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকে মন্তব্য করেন, এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের প্রতি নরম মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন বক্তব্য দলীয় অবস্থানকে ব্যাখ্যা করতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বিষয়টিকে “রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরির কৌশল” হিসেবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, বিএনপি ইচ্ছাকৃতভাবে দ্ব্যর্থক বক্তব্য দিচ্ছে যাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করেছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধের রাজনীতি করবে।
এই প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁর একটি মন্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয় এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য দলীয় ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. মাহবুব হাসান বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। তাই নেতাদের বক্তব্যের স্পষ্টতা থাকা জরুরি। এই ঘটনায় দেখা গেল, একটি আঞ্চলিক মন্তব্যকে জাতীয় পরিসরে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।”
তাঁর মতে, বিএনপি এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে, যা প্রমাণ করে—বক্তব্যের প্রভাব দলীয় কৌশলকেও প্রভাবিত করছে।
ফখরুলের আহ্বান
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “দেশের জনগণ ও দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাচ্ছি, গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে কান দেবেন না। আমরা ন্যায়ের রাজনীতি করি, প্রতিশোধের নয়।”
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ চায়। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক। যদিও তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে দেশব্যাপী মামলা প্রত্যাহারের কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা তাঁর নেই, তবুও বিষয়টি নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে আলোচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি কতটা বিভ্রান্তি দূর করতে পারে এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কতটা প্রশমিত হয়।
এম আর এম – ২১৯৬,Signalbd.com



