শীতকাল মানেই সবজির মৌসুম। বাজারে একের পর এক তাজা সবজির সারি, আর তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফুলকপি। ভাজি, তরকারি বা ভর্তা—সব জায়গাতেই এই সবজির কদর। কিন্তু জানেন কি, এই পুষ্টিকর সবজিটি সবার জন্য সমান উপকারী নয়? অনেকের শরীরে এটি নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ফুলকপি খাওয়ার আগে জেনে নিন কারা এই সবজি এড়িয়ে চলবেন এবং কেন।
থাইরয়েড রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে ফুলকপি
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগছেন, তাদের জন্য ফুলকপি একেবারেই উপযুক্ত নয়।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি — এই গোত্রের সবজিগুলোর মধ্যে থাকে ‘গয়ট্রোজেন’ নামক একটি উপাদান, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই উপাদান শরীরে টি-৩ ও টি-৪ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলে যারা নিয়মিত থাইরয়েডের ওষুধ সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে ফুলকপি খেলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগীদের সতর্ক থাকা উচিত
ফুলকপিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে তা বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা যদি বেশি পরিমাণে ফুলকপি খান, তাহলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যেতে পারে। এতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও বাড়ে।
তাই এই শ্রেণির রোগীদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সীমিত পরিমাণে ফুলকপি খাওয়া, অথবা একেবারে এড়িয়ে চলা।
গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যায় ভুগছেন যারা
যাদের হজমের সমস্যা, গ্যাস বা পেট ফাঁপার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য ফুলকপি একটি ‘ট্রিগার ফুড’।
এই সবজিতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি এবং পাশাপাশি এতে থাকা সালফার যৌগ হজমের সময় গ্যাস তৈরি করে। ফলে যাদের আগে থেকেই অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তারা ফুলকপি খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া, বুক জ্বালা বা হজমে সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, যদি ফুলকপি খেতেই হয়, তবে এটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত এবং পরিমাণে কম রাখা উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা
যাদের কিডনি দুর্বল বা কিডনি রোগ রয়েছে, তাদেরও ফুলকপি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।
ফুলকপিতে পিউরিন নামের একটি উপাদান থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং কিডনি স্টোন বা গাউটের ঝুঁকি তৈরি হয়।
তাই কিডনি রোগী বা ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের জন্য ফুলকপি পরিহার করাই ভালো বলে পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রযোজ্য
দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য ফুলকপি অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে থাকা গ্যাস সৃষ্টিকারী উপাদান শুধু মায়েরই নয়, শিশুরও পেটের অস্বস্তি বাড়াতে পারে। শিশুর পেটে গ্যাস জমে ব্যথা বা অস্থিরতা তৈরি হয়।
তাই মায়ের খাবারতালিকায় ফুলকপি রাখার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
ফুলকপির পুষ্টিগুণ: পরিমিত খেলে উপকারী
সব সতর্কতা সত্ত্বেও ফুলকপি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখে।
তবে উপকার পেতে হলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস যেকোনো সবজির ক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যাদের ওপরোক্ত কোনো সমস্যা নেই, তারা সপ্তাহে ২–৩ বার পরিমাণমতো ফুলকপি খেতে পারেন। রান্নার সময় এটি ভালোভাবে সিদ্ধ করলে গয়ট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাবও অনেকটাই কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পুষ্টিবিদদের মতে, “ফুলকপি একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাবার তালিকার অংশ হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অবস্থায় এটি ক্ষতিকর হতে পারে। থাইরয়েড, কিডনি বা হজমের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ফুলকপি পরিহার করা শ্রেয়। আর অন্যদের জন্য পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই যথেষ্ট।”
শীতের এই মৌসুমে ফুলকপির চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তবে যাদের শরীরে কিছু বিশেষ শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই সবজি উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করতে পারে। তাই ফুলকপি খাওয়ার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। পরিমিত ও সচেতন খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি।
এম আর এম – ২১৮৭,Signalbd.com



