চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনেই দেশে এসেছে ১১০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে পুরো মাসে রেমিট্যান্স তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে।
নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে এসেছে ১.১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স
চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দশ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১১০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে প্রায় ১১ কোটি ডলার করে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসীরা ১১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ কোটি ডলার বেশি।”
এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পুরো নভেম্বর মাসেই রেমিট্যান্স তিন বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করতে পারে।
গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের একই সময় দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রণোদনা এবং বৈধ ব্যাংক চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর সুবিধা বৃদ্ধির ফলে এই ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের (২০২৫–২৬) শুরু থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৯৭৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫.৪০ শতাংশ।
মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সের চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ এবং অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। নভেম্বরের শুরু থেকেই এই প্রবাহ আরও জোরদার হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাঠানো অর্থে প্রবৃদ্ধি বেশি দেখা যাচ্ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সই মোট আয়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।
পূর্ববর্তী অর্থবছরের রেকর্ড রেমিট্যান্স
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসীরা মোট ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর আগে কোনো বছরই ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেনি বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে রিজার্ভের একটি বড় অংশই প্রবাসী আয় থেকে আসে, যা দেশের আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
ডলার সংকট মোকাবিলায় রেমিট্যান্সের ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ের ডলার সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে প্রবাসী আয়ের এই ধারা সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অবৈধ হুন্ডি চ্যানেল থেকে অর্থ পাঠানোর পরিবর্তে বৈধ ব্যাংক চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে, যা ইতিবাচক সংকেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকও হুন্ডি প্রতিরোধে তৎপরতা বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে লেনদেন প্রণোদনা, দ্রুত সেবা এবং প্রবাসী কর্মীদের জন্য ডিজিটাল সুবিধা বৃদ্ধির ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “রেমিট্যান্স অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে চাপ থাকলেও প্রবাসী আয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখছে।” তিনি আরও বলেন, যদি সরকার প্রবাসীদের প্রণোদনা আরও বাড়ায় এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সেবা উন্নত করে, তবে মাসিক রেমিট্যান্স সহজেই তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রবাসীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আগামী মাসের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে ডিসেম্বরেও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ডিসেম্বর মাস সাধারণত উৎসব ও বছরশেষে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে নভেম্বরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পুরো ত্রৈমাসিকেই রেমিট্যান্স রেকর্ড ছাড়াতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রবাসী আয়ের এই উর্ধ্বগতি শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াচ্ছে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কারণ রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই সরাসরি গ্রামীণ খাতে খরচ হয়, যা বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে পারে, তবে বছরের শেষে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এম আর এম – ২১৮৬,Signalbd.com



