রাজনীতি

নির্বাচন হলে জামায়াতের অস্তিত্ব থাকবে না: মির্জা ফখরুল

Advertisement

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “যদি দেশে সত্যিকারের নির্বাচন হয়, তাহলে জামায়াতের মতো দলগুলোর রাজনৈতিক অস্তিত্বই থাকবে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এখন ভোট ও জনগণের রায়কে ভয় পায়, কারণ তারা জানে—একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে তাদের পতন নিশ্চিত।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কে কে বাড়ি লক্ষ্মীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ, জেলা কমিটির সদস্য ও হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ভোটের ভয় পাচ্ছে সরকার: ফখরুলের অভিযোগ

বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুল বলেন,
“জামায়াতে ইসলামী যা বলছে, সরকার এখন সেটা করতেই বাধ্য। তারা বলে—ওটা না করলে ভোট হবে না। আমি প্রশ্ন করি, তোমরা ভোটকে এত ভয় পাচ্ছ কেন? কারণ, তোমরা জানো—একটা সুষ্ঠু ভোট হলে তোমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই তোমরা নির্বাচনকে ভয় পাও, জনগণকে ভয় পাও।”

তিনি আরও বলেন, “এখন সরকার জনগণের চোখে ধুলো দিতে নানা নাটক করছে। সংস্কারের নামে তারা সময় নিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে জনগণের অধিকার ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেই।”

‘এনসিপি নেই, তবুও নাটক চলছে’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের সমর্থক কিছু ক্ষুদ্র দল ও তথাকথিত সংস্কারপন্থীরা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
তিনি বলেন,
“এলাকায় একটাও এনসিপি নেই। তাহলে তাদের ভোটটা হবে কীভাবে? অথচ এইসব দল এখন বড় বড় কথা বলে, জামায়াতের সঙ্গে সুর মেলায়। তারা পিআর চায়, কিন্তু জনগণ পিআর বোঝে না। এটি আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল।”

তার ভাষায়, “রাজনৈতিক সংস্কারের নামে সরকার কেবল সময় নষ্ট করছে। বাস্তবে তারা শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথ খুঁজছে।”

‘সংস্কার নয়, দায় সরকারের’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত নয় মাস ধরে সংস্কার ও সংলাপের নামে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা চললেও, তাতে কোনো বাস্তব সমাধান আসেনি।
“দীর্ঘ ৯ মাস সংস্কারের নামে আলাপ-আলোচনার পরও যদি সরকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো চাপিয়ে দিতে চায়, তাহলে এর দায় বিএনপি নেবে না। সেই দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারের ওপর বর্তাবে,” বলেন তিনি।

কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি

সভায় বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৫ মাসের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব। যুব সমাজকে উৎপাদনমুখী কাজে যুক্ত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, “নারীদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে, যাতে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সহায়তা পাওয়া যায়। পাশাপাশি কৃষকদের জন্য থাকবে ‘ফারমার্স কার্ড’, যার মাধ্যমে তারা সহজ শর্তে সার, বীজ ও ঋণ সুবিধা পাবেন।”

তিনি বলেন, “দেশের কৃষক, শ্রমিক, ও মধ্যবিত্ত পরিবার আজ দিশেহারা। সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি ঘটেছে। সাধারণ মানুষ তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।”

বর্তমান অর্থনীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজ দেশের ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের পথে। ডলার সংকট, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি, রিজার্ভ হ্রাস—সব মিলিয়ে অর্থনীতি ধুঁকছে। অথচ সরকার মিথ্যা উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন চলছে, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মানুষ চিকিৎসা, শিক্ষা ও ন্যূনতম খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে। এই বৈষম্যই প্রমাণ করে—সরকার জনগণের নয়, কেবল নিজেদের দলীয় স্বার্থে কাজ করছে।”

জনগণের ভোটাধিকার ফেরাতে আন্দোলনের ডাক

বিএনপি মহাসচিব বলেন,
“আমরা কোনো ষড়যন্ত্রে নেই। আমরা কেবল জনগণের ভোটের অধিকার ফেরাতে লড়াই করছি। দেশের মানুষ আজ পরিবর্তন চায়, সুষ্ঠু ভোট চায়, গণতন্ত্র চায়। সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি মাঠে থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই আন্দোলন কেবল বিএনপির নয়—এটা বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলন। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন এই সরকারকে জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে।”

স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি ও জনগণের সাড়া

ঠাকুরগাঁওয়ের এই মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন। অনেকেই ফখরুলের বক্তব্যের সময় করতালিতে সমর্থন জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বক্তব্যের তাৎপর্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় দলের শীর্ষ নেতার এমন বক্তব্য স্থানীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করবে।
তারা মনে করছেন, ফখরুলের “জামায়াতের অস্তিত্ব থাকবে না” মন্তব্যটি কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির একক কৌশল ও অবস্থান স্পষ্ট করার ইঙ্গিত বহন করছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সভায় মির্জা ফখরুলের বক্তব্য স্পষ্টভাবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
তিনি শুধু সরকারের নীতি নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
একইসঙ্গে তিনি বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান, কৃষি ও নারী উন্নয়ন কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরে জনগণকে নতুন আশার বার্তাও দিয়েছেন।

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন,
“আমরা ভয় পাই না। ভয় পায় তারা, যারা জানে জনগণের রায় তাদের বিরুদ্ধে যাবে। আজ জনগণ ঐক্যবদ্ধ—এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

MAH – 13747 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button