সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর বিরুদ্ধে গঠিত আন্তর্জাতিক জোটে সিরিয়া যোগদান করতে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘোষণা আসে। খবরটি প্রথম প্রকাশ করেছে বিবিসি।
সিরিয়ার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়
ইসলামপন্থি নেতা আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে গত বছরের শেষ দিকে বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
গতকাল হোয়াইট হাউসে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৯৪৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর এটি হোয়াইট হাউসে কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে শারার নাম বাদ দেওয়ার কয়েকদিন পরই তিনি ওয়াশিংটনে সফর করেন। শারার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) পূর্বে আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিল।
সিরিয়ার যোগদান: কৌশল ও লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, শারার সফরের সময় সিরিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা ইসলামিক স্টেটবিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দেবে। এতে সিরিয়া এই জোটের ৯০তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
সিরিয়ার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মূলত তিনটি লক্ষ্য সামনে এসেছে:
- সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম জোরদার করা
- নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সমন্বয় শক্তিশালী করা
- অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় উন্নত করা
কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিক
ওই কর্মকর্তা জানান, সিরিয়াকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিরিয়ার এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে, আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন ও স্থানীয় স্থিতিশীলতা ফেরানোর ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
হোয়াইট হাউস বৈঠকের গুরুত্ব
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের নেতারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল:
- সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক জোটের কার্যক্রম
- মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রক্রিয়া
- সিরিয়ার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পুনরায় সংযুক্তি
- দুই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয়
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু সিরিয়া নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মুক্ত করবে।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
শারার নেতৃত্বে সিরিয়া এখন একটি নতুন দিকের দিকে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সিরিয়া কেবল নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও অর্জন করতে পারবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও সিরিয়ার এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সিরিয়ার পুনরায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিরিয়ার এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। বিবিসি, আল-জাজিরা ও অন্যান্য সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার আইএসবিরোধী জোটে যোগ দেওয়া মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিরিয়ার এই নতুন নীতি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
সিরিয়ার আন্তর্জাতিক জোটে যোগদান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন অধ্যায় সূচিত করছে।
সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে এই পদক্ষেপ বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
MAH – 13744 I Signalbd.com



