দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে শীতের আগমনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ, ফলে মানুষের মধ্যে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বর মাসের এই সময়েই ধীরে ধীরে হালকা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করে, যা ডিসেম্বর মাসে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার একই স্থানে তাপমাত্রা ছিল ১৬.৫ ডিগ্রি। অর্থাৎ একদিনে প্রায় দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা কমেছে। এর সঙ্গে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঢাকা দেয় পুরো এলাকায়। ঘন কুয়াশার কারণে মাঠ-ঘাট, গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরের রাস্তাঘাট পর্যন্ত যেন সাদা চাদরে মোড়া হয়ে গেছে। যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে সতর্কভাবে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শীতের আগমনী হাওয়া এখন প্রকৃত অর্থেই অনুভূত হচ্ছে। হাড়িভাসা এলাকার অটোচালক রহিম উদ্দীন বলেন, “সকালে কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালালেও সামনের রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায় না। তাই ধীরে চলাচল করতে হয়।” অন্যদিকে চাকলাহাট এলাকার বাসিন্দা মাসুম জানান, “সকালে খুব ঠান্ডা লাগে। শীতের পোশাক না পরলে থাকা সম্ভব হয় না।”
আবহাওয়ার পর্যালোচনা
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বর্তমানে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। নভেম্বরের শেষ দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এরপর ডিসেম্বর মাসজুড়ে পঞ্চগড় ও আশপাশের এলাকায় একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
শীতের আগমনী হাওয়া শুরু হওয়ায় জেলার মানুষ এখন দিনের বেলায় গরম ও রাতে শীত—এই মিলিত আবহাওয়ার মধ্যে জীবন যাপন করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঞ্চগড়ের মতো উত্তরাঞ্চলের জন্য নভেম্বর মাস থেকেই হালকা শীতের প্রভাব দেখা যায়। বিশেষ করে ভোর ও সকালে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে।
ভোরের কুয়াশা এবং স্বাস্থ্য
শীতের আগমনী হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা গ্রামের জনপদে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সকালবেলার কুয়াশার কারণে স্কুলগামী শিশুদের সঙ্গে অফিস-কার্যালয়ের মানুষেরও চলাচল দেরিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সঙ্গে কুয়াশা থাকলে শ্বাসনালি ও চোখের সংক্রমণ হতে পারে। তাই ভোরবেলায় বাইরে বের হওয়া হলে গরম পোশাক, সঠিক মাস্ক এবং চোখ ঢাকার ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
তাপমাত্রার তুলনামূলক পর্যালোচনা
পঞ্চগড়ের তাপমাত্রার রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার নভেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেই তুলনায় প্রায় দুই ডিগ্রি কম। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের পরিবর্তন প্রাকৃতিক আবহাওয়ার নিয়মিত ঘটনা। তবে, হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে অল্প বয়সী শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের জন্য সতর্কতা প্রয়োজন।
শীতের প্রস্তুতি
স্থানীয়রা শীতের আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বাজারে শীতের পোশাকের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় শহরের বিভিন্ন দোকানে কুর্তা, সোয়েটার, শাল এবং গরম কম্বল বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা শীতের আগাম সতর্কতা হিসেবে ফসল সংরক্ষণে মনোযোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে ধান, মুগ, আলু ও শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য শীতের সময়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।
পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা রাতের বেলায় ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। দিনের বেলায় ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রির মধ্যে থাকতে পারে। হালকা হাওয়াসহ কোথাও কোথাও কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই জনসাধারণকে শীত প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এলাকার জনজীবনে প্রভাব
শীতের আগমন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ভোরবেলা কুয়াশা ও শীতের কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দেরিতে আসছেন। যানবাহন চলাচলে সতর্কতা বজায় রাখতে হচ্ছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যসতর্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দোকানপাটের মালিকরা শীতের পোশাক ও কম্বল বিক্রি বাড়াচ্ছেন।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
শীতের আগমনী হাওয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে সকাল-বিকেল বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কৃষকেরা ফসল সংরক্ষণে বাড়তি খরচ করছেন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কারণে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কিছু পর্যটক শীতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পঞ্চগড়ের গ্রামীণ এলাকায় আগমন করেছেন।
পঞ্চগড়ে শীতের আগমন ধীরে ধীরে শুরু হলেও এর প্রভাব জনজীবনে ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশা, কমে যাওয়া তাপমাত্রা, দিনের তাপে মিলিত আবহাওয়া—সব মিলিয়ে জেলার মানুষ এখন শীত ও গরমের মিলিত পরিবেশে জীবনযাপন করছেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার পর ডিসেম্বর মাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, তাই জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের শীতের এই আগমনী হাওয়া স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে। শীতের পোশাক, স্বাস্থ্যসতর্কতা ও ফসল সংরক্ষণ—সবই এখন মানুষের জন্য অগ্রাধিকার।
MAH – 13738 I Signalbd.com



