নারী ফুটবলকে আরও সম্প্রসারিত ও উন্নত করতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সঙ্গে একত্রে কাজ করবে। ফিফার ‘এমপাওয়ার হার’ নামের এই প্রকল্পে বিশ্বের ৬ কোটি নারী ফুটবলারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এই উদ্যোগে টেকনিক্যাল এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানান, দেশের নারী ফুটবল সম্প্রসারণ, ক্লাব সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঘরোয়া লিগের নিয়মিত আয়োজনই হবে তাদের মূল অগ্রাধিকার।
ফিফার ‘এমপাওয়ার হার’ প্রকল্প
ফিফা ‘এমপাওয়ার হার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত নারী ফুটবলকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ফিফার এশিয়ান অঞ্চলের নারী ফুটবলে উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সাইমন এন্থনি সোমবার একটি অনুষ্ঠানে জানান, এই তিন বছরের পরিকল্পনায় নারী ফুটবলে কোচ ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, ক্লাব সম্প্রসারণ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের জরিপে দেখা গেছে নারী কোচের সংখ্যা নারী-পুরুষ লিগ মিলিয়ে মাত্র ২২ শতাংশ। আমরা এই চার বছরে এই সংখ্যা অনেক বেশি করতে চাই। বাংলাদেশের নারী ফুটবল সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। তাই আমরা এখানে এসে আমাদের লক্ষ্য শেয়ার করছি, যেন বাফুফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারি।”
বাংলাদেশে সম্ভাব্য কার্যক্রম
বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেছেন, “আমাদের দেশে নারী ফুটবল ক্লাবের সংখ্যা কম। তাই আমরা ঘরোয়া লিগ বৃদ্ধি, সুযোগ-সুবিধা উন্নয়ন এবং খেলোয়াড়দের মান বৃদ্ধি করতে চাই। ফিফা আমাদের প্রযুক্তিগত ও আর্থিকভাবে সহায়তা করবে।”
এছাড়া তিনি জানান, শুধু খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ নয়, নারীদের সমাজে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সময় তাদের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি থাকবে। অনেক সময় নারী খেলোয়াড়রা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারীর সামাজিক ও মানসিক উন্নয়ন
ফিফা-বাফুফের যৌথ উদ্যোগ শুধু খেলার মান উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নারী ফুটবলকে সামাজিকভাবে মান্য করা এবং নারীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বাফুফে সভাপতি বলেন, “নারীদের খেলার মাধ্যমে শুধু শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি হবে না, বরং মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্বের গুণাবলিও বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই নারীরা ফুটবল খেলতে খেলতে সমাজে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করুক।”
নারীর কোচ ও ক্লাব সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ
ফিফার সমীক্ষা অনুযায়ী, নারী কোচের সংখ্যা বর্তমান সময়ে খুবই সীমিত। বাংলাদেশে নারী ক্লাবের সংখ্যা কম, যা খেলার সুযোগ সীমিত করে। এই দুই ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ফিফা-বাফুফে যৌথভাবে প্রশিক্ষণ, ফান্ডিং এবং ক্লাব উন্নয়ন করবে।
তাবিথ আউয়াল বলেন, “নারী ফুটবলের ক্লাব সংখ্যা বৃদ্ধি, ঘরোয়া লিগ নিয়মিত করা এবং খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি আমাদের লক্ষ্য। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে নারী ফুটবল আরও শক্তিশালী হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রভাব
ফিফার এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার অন্যান্য দেশের নারী ফুটবলও নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ, কোচিং এবং সাপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে নারী ফুটবলকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
সাইমন এন্থনি বলেন, “এশিয়ার প্রধান হিসেবে আমি প্রতিটি দেশে নারী ফুটবল নিয়ে ভ্রমণ করি। আমরা চাই নারী ফুটবলকে সর্বজনীনভাবে শক্তিশালী করা হোক এবং খেলোয়াড়রা সুযোগের অভাবে পিছিয়ে না থাকুক।”
ফিফা-বাফুফের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে নতুন মাত্রা দেবে। ঘরোয়া লিগের সম্প্রসারণ, ক্লাব সংখ্যা বৃদ্ধি, কোচিং উন্নয়ন এবং সামাজিক সমর্থন এই প্রকল্পের মূল অঙ্গ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে বিশ্ব মঞ্চে আরও দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারে।
এম আর এম – ২১৭৬,Signalbd.com



