অর্থনীতি

ফের বাড়লো স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?

Advertisement

দেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) নতুন করে ভরিতে ২ হাজার ৫০৭ টাকা বাড়িয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৮৩ টাকা। আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে।

ঘটনার বিস্তারিত ও নতুন দাম নির্ধারণ

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে বাজুস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বাজারে কাঁচা স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গহনার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে বলে সংস্থাটি জানায়।

নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৪ হাজার ২৮৩ টাকা, ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪২ টাকা।

বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণ বিক্রির সময় সরকারের নির্ধারিত ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও বাজুসের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন, কাজের মান ও দোকানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধি

স্বর্ণের দাম এর আগেও সম্প্রতি সমন্বয় করা হয়েছিল। গত ১ নভেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৬৮০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস, যা কার্যকর হয়েছিল ২ নভেম্বর থেকে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে কাঁচা স্বর্ণের সরবরাহে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও দাম বাড়ানো হলো। ফলে, অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই ভরিতে মোট ৪ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে স্বর্ণের দাম।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দেশের খুচরা গহনার বাজারে ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে, তবে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাজুসের এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় ছিল।

বাজারে ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

স্বর্ণের দাম বাড়ার খবরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এখন স্বর্ণ কেনা অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য যারা আগেভাগে স্বর্ণ কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের জন্য এটি হতাশার খবর।

একজন ক্রেতা বলেন, “মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই দাম বাড়ল, এখন আবারও বেড়ে গেল। এখন এক ভরি কিনতে গেলে ২ লাখ টাকার বেশি দিতে হচ্ছে, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।”

অন্যদিকে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করাই এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ। ঢাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, “বিশ্ববাজারে দাম না কমলে স্থানীয়ভাবে কমানো সম্ভব নয়। তবে আমরা আশা করছি, শিগগিরই দাম স্থিতিশীল হবে।”

তুলনামূলক চিত্র: স্বর্ণ বনাম রুপার দাম

স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেলেও দেশে রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাজুস জানিয়েছে, বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকায়, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৪ হাজার ৪৭ টাকায়, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৩ হাজার ৪৭৬ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা।

এর ফলে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে স্বর্ণের দাম যেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে রুপার দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, রুপার আন্তর্জাতিক চাহিদা সীমিত হওয়ায় এর দামে তেমন ওঠানামা দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণে ঝোঁকের কারণে এই বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “বাংলাদেশের স্বর্ণবাজার সরাসরি আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সংযুক্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রতিফলিত হয়। তবে ঘন ঘন দাম পরিবর্তন সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তিকর।”

বাজারে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

বাজুসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য ও স্থানীয় বাজারের যোগান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমে, তাহলে দেশে পুনরায় দাম সমন্বয় করা হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডিসেম্বরের আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। কারণ, বছরের শেষ ভাগে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের চাহিদা সাধারণত বৃদ্ধি পায়। ফলে স্থানীয় বাজারেও দাম কিছুটা বেশি থাকবে বলে তারা ধারণা করছেন।

স্বর্ণের দামে এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকার উপরে চলে যাওয়ায় দেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম সর্বোচ্চ মূল্যস্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা খুবই সীমিত।

তবে বাজুসের দাবি, ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় এনে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন দেখা যাক, বিশ্ববাজারে পরিবর্তন এলে বাংলাদেশের বাজারে কবে আবার স্বস্তি ফিরে আসে।

এম আর এম – ২১৭১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button