রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কেউ ছুঁতে পারবে না – মির্জা ফখরুল

Advertisement

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের উত্তাপ বাড়ছে দিন দিন। মাঠে নেমেছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। এমন সময় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক আবেগপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,
“আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গায়ে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না।”

এই বক্তব্যটি শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি এ বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠে সহিংসতা ও ভয়ভীতি নয়, বরং শান্তিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানান।

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সভা: জনসমাগমে উত্তাল মাঠ

১০ নভেম্বর, সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদরের বড়দ্বেশ্বরী মাঠে বিএনপির আয়োজিত এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠজুড়ে হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কর্মী ও সমর্থকদের হাতে ধানের শীষের পতাকা, গলায় নীল-সাদা ব্যানার। পুরো মাঠ যেনো এক উৎসবে পরিণত হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতায় তিনি শুধু দলের কর্মীদের সাহস জোগাননি, বরং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচনের নানা দিক তুলে ধরেন।

নৌকা বনাম ধানের শীষ: রাজনীতির প্রতীকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে “ধানের শীষ” ও “নৌকা”—এই দুটি প্রতীক বহুদিন ধরে জনগণের মনে গেঁথে আছে। একদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা, অন্যদিকে বিএনপির ধানের শীষ—এই প্রতীকগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘদিনের।

মির্জা ফখরুল বলেন,
“দীর্ঘদিন ধরে দেশের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ধানের শীষ ও নৌকা। কিন্তু এবারের নির্বাচনে নৌকা থাকবে না, কারণ নৌকার মাঝি সবাইকে ফেলে পালিয়ে গেছেন।”

তার এই মন্তব্যে মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাসি ও করতালিতে ফেটে পড়েন।

তিনি আরও বলেন,
“নৌকার মূল মাঝি ইন্ডিয়া চলে গেছেন। এখন কেউ হতাশ হবেন না, ধানের শীষ আপনাদের পাশে আছে।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব নিয়ে ব্যঙ্গ করলেও, নিজের দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে আশা ও আত্মবিশ্বাসের বার্তা দেন।

জনগণের ভোটের অধিকার ও গণভোট ইস্যুতে ফখরুলের কড়া বক্তব্য

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে “পিআর ব্যবস্থা” বা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (Proportional Representation) নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আট দলের এক জোট পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন,
“দেশের সাধারণ মানুষ পিআর বুঝে না। অথচ জোর করে জনগণের ওপর তা চাপিয়ে দিতে চায় সরকারপন্থী দলগুলো। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”

তিনি আরও যোগ করেন,
“আগে সুষ্ঠু ভোট হোক, জনগণ যার পক্ষে ভোট দেবে, সে জয়ী হোক—তারপর পিআর নিয়ে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু গণভোটের অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া বা প্রভাবিত করা আমরা মেনে নেব না।”

ঠাকুরগাঁওয়ের রাজনীতি: বিএনপির শক্ত ঘাঁটি

ঠাকুরগাঁও দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির একটি শক্ত রাজনৈতিক দুর্গ হিসেবে পরিচিত। মির্জা ফখরুল নিজেও এখানকার সংসদ সদস্য ছিলেন। ফলে এই অঞ্চলের প্রতিটি সভা, সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণায় জনসমাগম দেখা যায় ব্যাপকভাবে।

স্থানীয় নেতারা বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এখানে নির্বাচনের সময় সব দলই সক্রিয় থাকে, তবে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগ ও আস্থা এখনো প্রবল।

বিএনপির লক্ষ্য: নির্বাচনমুখী ঐক্য ও পরিবর্তনের ডাক

বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বারবার বলেছেন, বিএনপি এখন আর কেবল বিরোধিতার রাজনীতি করতে চায় না, বরং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায়।

তিনি বলেন,
“আমরা চাই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। জনগণ যাকে বেছে নেবে, তাকেই দেশ চালানোর দায়িত্ব দিতে হবে।”

ফখরুলের বক্তব্যে বারবার প্রতিধ্বনিত হয় “আন্দোলন নয়, পরিবর্তনের” ডাক। তিনি বলেন,
“এই দেশ আমাদের, এই মানুষ আমাদের। আমরা কারো দাসত্বে থাকব না। এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার।”

সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্ন

সভায় বিএনপি মহাসচিব সরাসরি সরকারকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন,
“আপনারা বলছেন, দেশে গণতন্ত্র আছে। তাহলে কেন বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হয়? কেন মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়?”

তিনি বলেন,
“গণতন্ত্রে বিরোধী মত থাকা অপরাধ নয়। আমরা চাই একটি সমান সুযোগের পরিবেশ, যেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি—সব দল সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।”

সমর্থকদের উদ্দেশে আশ্বাস: ভয় নয়, ঐক্য

বক্তৃতার শেষ অংশে মির্জা ফখরুল তার দলের সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলেন,
“আমরা বেঁচে থাকতে আপনাদের গায়ে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না। ভয় পাবেন না, সাহস নিয়ে মাঠে থাকুন। ধানের শীষের জয় আসবেই।”

তিনি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেন এবং সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশে বলেন,
“আপনাদের ভোটই দেশ পরিবর্তনের চাবিকাঠি। তাই ভয় না পেয়ে ভোট কেন্দ্রে যান, নিজের অধিকার প্রয়োগ করুন।”

বিশ্লেষণ: ফখরুলের বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য শুধু দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্যই নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিতে একটি শক্ত বার্তা পাঠিয়েছে। তিনি একদিকে আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক অনুপস্থিতি’ নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্যদিকে বিএনপির উপস্থিতি ও ঐক্য তুলে ধরেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“এই বক্তব্য মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবে। দীর্ঘদিন রাজপথে আন্দোলনের পর এখন তারা নির্বাচনের ময়দানে নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে।”

ঠাকুরগাঁও থেকে দেশের রাজনীতির বার্তা

ঠাকুরগাঁওয়ের এই সভা কেবল স্থানীয় নয়, জাতীয় রাজনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে।
এটি প্রমাণ করেছে, বিএনপি এখনো মাঠে সক্রিয়, তাদের সমর্থনভিত্তি টিকে আছে, এবং তারা নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন চায়।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে যেমন আবেগ আছে, তেমনই আছে দৃঢ় রাজনৈতিক বার্তা—
“আমরা লড়ব, কিন্তু ভালোবাসা ও গণতন্ত্রের পথে।”

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে প্রতিদিন। একদিকে সরকার ও তার সহযোগী দলগুলো পিআর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কথা বলছে, অন্যদিকে বিএনপি ও বিরোধী জোট বলছে, আগে সুষ্ঠু নির্বাচন, তারপর সংস্কার।

এই পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য যেন এক রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র—
ভয় নয়, ঐক্য ও গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন।

MAH – 13730 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button